• ৩০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৩রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য গোয়াইনঘাট ও জৈন্তা সীমান্ত : দেখার কেউ নেই !

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ৯, ২০২৩
চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য গোয়াইনঘাট ও জৈন্তা সীমান্ত : দেখার কেউ নেই !

বিছনাকান্দি সীমান্ত দিয়ে দিনের বেলা ভারত থেকে গরু আসার দৃশ্য।

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত এখন চোরাচালানী আর বখরাবাজদের স্বর্গরাজ্য। সীমান্তের প্রায় ৫০টি পয়েন্ট দিয়ে অবাঁধে প্রকাশ্য আসছে ভারতীয় গরু মহিষ, চিনি, পান মসলা, কসমেটিকসহ নানা রকম মাদকের চালান। এর বিপরীতে দেশ থেকে যাচ্ছে খাদ্য সমাগ্রীসহ মূল্যবান পণ্য আর বৈদেশিক মূদ্রা। এমন অভিযোগ স্থানীয় জনগনের। সীমান্ত সূত্র থেকে প্রাপ্ত অভিভযোগে জানা যায়, সম্প্রতি বাংলাদেশে গরুর মাংস ও চিনির দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর সীমান্ত হয়ে ওঠেছে গরু ও চিনি চোরচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট। সক্রিয় হয়ে ওঠেছে চোরাকারবারি ও বখরা সিন্ডিকেট।

যদিও আজ রবিবার জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লা আল মামুন সিলেট এর অপরাধ পর্যালোচনায় কালে উল্লেখ করেন, বিগত মার্চ ২০২৩ মাসে সিলেট জেলায় ১৯৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরনের চুরির মামলা হয়েছে ১৭টি, খুন ৩টি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩৮টি এবং অন্যান্য অপরাধে ১০৬টি মামলা হয়েছে।
সিলেট মহানগরীর অপরাধ পর্যালোচনায় উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর এসএমপি) আজবাহার আলী শেখ বলেন, সিলেট মহানগরীতে মার্চ ২০২৩ মাসে ১৮১টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন ধরণের চুরির মামলা হয়েছে ২৬টি, খুন ২টি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৪২টি এবং অন্যান্য অপরাধে ৬২টি মামলা হয়েছে।
অধিনায়ক ১৯ বিজিবি, সিলেট সভায় বলেন, গতমাসে ১২৬টি অভিযান পরিচালনা করে আনুমানিক ২কোটি ৮৩ লক্ষ ৫৭৫০০ টাকার অবৈধ মালামাল আটক করা হয়েছে। অধিনায়ক ৫২ বিজিবি, সিলেট সভায় বলেন, গত মাসে ৯৩০টি চোরাচালান ও মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ২,০৬,৩০০ টাকার অবৈধ পণ্য আটক করা হয়। সভা শেষে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক, সিলেট উপস্থিত সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেন। কিন্তু আসলে কি থানা পুলিশ সঠিক ভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে সেই খবর কে রাখে।
অভিযোগে প্রকাশ, গোয়াইনঘাটের চোরাকারবারিদের প্রধান হচ্ছেন গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের রাধানগরস্থ ইসলামপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ। এই আব্দুল্লা থানার সাবেক ওসির ল্যাইনম্যান ছিলো। বর্তমান ওসির সময়ে এই আব্দুল্লাহ এখন নিয়ন্ত্রন করে চোরাকারবারীদের এই সিন্ডিকেট।
আর জৈন্তাপুর উপজেলায় নিয়ন্ত্রন এখন বেন্ডিস করিম ও আওমীলীগ নেতা লিয়াকতের ভাই সাবেক মেম্বার ইসমাইলসহ তার আরএস বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে। আরএস বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে ইসমাইল। করিম আর ইসমাইল ছাড়াও রয়েছে তাদের ১০/১৫ জনের ল্যাইনম্যান সিন্ডিকেট। থানা বখরা দিয়ে নির্বিঘেœ চলছে চোরাচালানের ব্যবসা। জৈন্তা সীমান্তের চোরাচালানের টাকা এসআর বাহিনীর মাধ্যমে ভারতে পাচার হচ্ছে চোরাচালানের টাকা।
অন্যদিকে চোরচালান নির্বিঘেœ করার জন্য গোয়াইনঘাটে গড়ে ওঠেছে আরেকটি বখরা সিন্ডিকেট। এই বখরা সিন্ডিকেটে রয়েছেন গোয়াইঘাট থানা পুলিশের দুইজন অফিসার সহ ৮ লাইনম্যান। বখরা সিন্ডিকেট সদস্য তথা লাইম্যানরা থানার ওসি কে.এম নজরুল-এর নামে বখরা আদায় করে থাকেন। তারা চোরকারবরিদের কাছ থেকে ভারতীয় গরু প্রতি ১ হাজার টাকা করে পুলিশের বখরা আদায় করে থাকেন। চোরাইপথে আনা চিনির বস্তা প্রতি আদায় করেন ২শ’ টাকা করে। পাশাপাশি রয়েছে মাসিক সীমান্ত ঘাটের চুক্তি। এভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু-মহিষ ও হাজার বস্তা চিনি আমদানী হচ্ছে থানার বিছনাকান্দি ও প্রতাপপুর-সোনারহাট সীমান্ত দিয়ে। বখরাবাজ লাইম্যানরা হচ্ছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহির ও এসআই মিহির। তাদের নিয়োজিত লাইনম্যানরা হচ্ছেন বিছনাকান্দি সীমান্তে থাকা শেরগুল ও নুরু। প্রতাপপুর সীমান্তে থাকা মোস্তফা ও হেলাল এবং সোনারহাট সীমান্তে বিএনপির মেম্বার কামাল ও শাকিল। শাকিল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফারুক আহমদের ভাই। শাকিল প্রতিদিন চোরাই পথে আসা গরু প্রতি ১ হাজার টাকা করে থানার ওসির তহবিলে দিয়ে থাকেন এবং তিনি সকল লাইনম্যানদের সমন্বয় করে থাকেন বলে অভিযোগে প্রকাশ।
অভিযোগে রয়েছে, ওসি কে.এম নজরুল থানার এসআই মিহিরকে বিছনাকান্দি সীমান্তে বখরা আদায়ের জন্য নিয়োজিত করে রেখেছেন। এই সীমান্ত দিয়ে গরুপ্রতি প্রথমে বখরা আদায় করেন শেরগুল ও নুরু। পরে তারা থানা পুলিশের টাকার ভাগ এসআই মিহিরে কাছে বুঝিয়ে দেন। সোনারহার্ট-প্রতাপপুর সীমান্তে গরুর টাকা আদায় করেন বিএনপির কামাল মেম্বার ও হেলাল মেম্বার। এই দুইজনই থানার এসআই জহিরকে পুলিশের টাকার হিসাব বুঝিয়ে দেন।
এছাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফারুক আহমদের ভাই সাকিল আলাদা করে ওসির নামে ১শ’ টি গরুর টাকা আদায় করে তা সরাসরি ওসিকে বুঝিয়ে দেন। লাইনম্যান হেলালমেম্বার মাস শেষে বখরার একটা অংশ স্থানীয় কিছু নেতা-খেতাদের মোবাইলে বিকাশ করে পাঠিয়ে দেন।
গরু ছাড়াও প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে গাড়ি ভর্তি ভারতীয় খাসিয়া পান ও ভারতীয় চিনি প্রবেশ করে। এসব পণ্যের বখরা একাই বুঝে নেম গোয়াইঘাট থানার এসআই জহির। চিনির বস্তা প্রতি এসআই জহিরকে ২শ’ টাকা করে দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।এবিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার এসআই জহির ও এসআই মিহির’র সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বখরা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা উপরে বর্ণিত লাইনম্যানদের কাউকে চিনেন না বলেও জানান।গোয়াইনঘাট থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মেহেদী হাসানের সাথে সেলফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে সত্য-মিথ্যা কোনো বক্তব্য না দিয়ে ফোনে শুধুমাত্র বখরাবাজদের নাম লিখে নেন।
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গোয়াইনঘাট থানার ওসি কে.এম নজরুলের সরকারি সেলফোনে বার বার কল দিলেও তিনি সাংবাদিকের মোবাইল ফোন রিসভ করেননি। গোয়াইনঘাট সার্কেলের এএসপি প্রবাস কুমার সিংহের সেলফোনে কল দিলে তিনি এটা সম্পূর্ণ ওসির ব্যক্তিগত বিষয় বলে কল কেটে দেন।

আগামীকাল পড়ুন ‘সীমোন্তের চোরাচালান থেকে এসএমপির এক পুলিশ পরিদর্শকের মাসিক আয় ৩ লক্ষ টাকা’।

৬৯৯ পড়েছেন