• ৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১২ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

দ্বিধাবিভক্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ

admin
প্রকাশিত জুন ১, ২০২৩
দ্বিধাবিভক্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ

দ্বিধাবিভক্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিনিধি: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। পক্ষে বিপক্ষে রাজপথে হচ্ছে মিটিং মিছিল সমাবেশ। ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ এক সময়ে আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিতি গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগ এখন দ্বিধা বিভক্ত । অভিযোগ উঠেছে বর্তমান সংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকা কালীন সময়ে ১৯৯১ সালে ৮ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে সিলেট গোলাপগঞ্জ -বিয়ানীবাজার সিলেট -৬ আসনে নৌকা মার্কা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরফ উদ্দিন খসরুর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। এরপর ১৯৯৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সাদরে তাকে গ্রহণ করলেও তিনি আজও স্থানীয়দের কাছে আওয়ামী লীগার হতে পারেন নি । বিগত ১৯৯৬ সালে নৌকা প্রতিক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। এ সময় বিএনপি প্রার্থী প্রয়াত ড. সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়াকে পরাজিত করে প্রথমবার নাহিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে ড.সৈয়দ মকবুল হোসেন লেচু মিয়ার কাছে তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হন। এরপর ২০০৮ সালে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ‘সহনীয় মাত্রায় ঘুষ খাওয়ার পরামর্শ দাতা ও মন্ত্রীরা চুর নিজেও চোর’ এই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশে বিদেশে তুমুল সমালোচনার মধ্যে ফেলেদেন। এই বিতর্কিত বক্তব্যর কারণে নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও মন্ত্রীত্ব আর ফিরে পাননি। বিগত সম্মেলনে তিনিই একমাত্র প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে বঞ্চিত নাহিদ এখন উপদেষ্টা মন্ডলীর দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ১৫ বছরে তিনি দলকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত না করে নিজ বলয়ের সুবিধাভোগীদের দিয়ে সরকারের সকল উন্নয়ন মূলক কাজ করে স্থানীয় ভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। ফলে তার এহন অনেক কর্মকান্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। গত ৩০ শে মে গোলাপগঞ্জে নিজ অনুসারী ও সকল স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের বিদ্রোহী জনপ্রতিনিধি সহ মদদদাতাদের নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে উপজেলা পৌর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠন কে না জানিয়ে গোলাপগঞ্জে গনমিছিলের আয়োজন করেন নিজস্ব অর্থায়নে। এই গণ মিছিল বা সমাবেশ নিয়ে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সাথে কোন পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত নেননি। আর এতে বিপত্তি বাধেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৩৯ জন কার্যনির্বাহী সদস্য সহ পৌর, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ সেচ্ছাসেবক লীগ সহ অন্যন্য সহযোগী সংগঠন তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আওয়ামীলীগের ব্যানার ব্যবহার বন্ধ রাখতে বাধ্য হন নাহিদ বলয়ের নেতারা। ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ না করে উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতাদের বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অনড় নাহিদ আওয়ামী লীগের ব্যানার বাদ দিয়ে “গোলাপগঞ্জের সর্বস্তরের জনগনের ব্যানারে” মিছিল করেন যার ফলে নতুন করে আবার উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভিক্তি প্রকাশ পায়। গ্রুপিং মিছিল কে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামীলীগ নতুন করে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নিজের মিছিল সফল করতে নাহিদ অনুসারীরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলা থেকে লোকজনকে নিয়ে আসেন অর্থের বিনিময়ে। এমন অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের। ফলে গোলাপগঞ্জের জনসাধারণের মাঝে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এটা নাকি তার নিজস্ব গ্রুপের মিছিল ছিল। এমনটি তিনি নিজে ফেইসবুক আইডিতে ও স্বীকার করেন। সামনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বর্তমান কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকায় এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদের গ্রপিং এই মিছিল নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারনের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও উপজেলা আওয়ামীলীগের ব্যানার ব্যবহার করতে ব্যর্থ নাহিদের মিছিলে শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রিত অতিথির নামে উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির নিজ বলয়ের মাত্র ১৭ জন সদস্য মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। আর বাকি ৩৯ জনসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী ৪৮ সদস্য নাহিদের এই মিছিলে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি হওয়ার পর তার প্রতিনিধিত্ব তুলেদেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিসবাহ উদ্দিনের হাতে। সেই সুযোগে মিসবাহ নাহিদ বলয় নামে একটি পৃথক গ্রুপ তৈরী করে গোলাপগঞ্জে। যে সকল নেতাকর্মী মিসবাহকে নেতা স্বীকার করেনি তাদেরকে সে বলয়ে রাখা হয়নি তাদেরকে বানিয়ে দেওয়া হয় বিদ্রোহী গ্রুপ। প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা দীর্ঘ দিনে এমপি নাহিদের ধারে কাছে আসতে পারেননি নিজ বলয়ে নেতাদের যন্ত্রনায় ফলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাঙ্গনটা বেশ পুরানো। সম্প্রতি নিজ বলয়ে নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল করে নাহিদ প্রমান করলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কয়েক ভাবে বিভক্ত। দলের এই অবস্থায় সাজানো গোছানা একটি রাজনৈতীক ভাঙ্গনের দায় কে নিবে এমন প্রশ্ন সাধারণ কর্মীদের।

৬৫২ পড়েছেন