Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২১ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া সিলেটে চলে ভোটগ্রহণ। এ নির্বাচনে চমক দেখিয়ে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে আসতে শুরু করে ফলাফল। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেসরকারিভাবে পাওয়া ফলাফলে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সবকি’টি ১৯০টি কেন্দ্রে পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। আর তাঁর নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২টি, স্বতন্ত্র শাহজাহান মাষ্টার বাস গাড়ি ২৯হাজার ৮৮৮টি ভোট পেয়েছেন।
সকাল ৮টা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর মাধ্যমে সিলেটে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শুরুর আগে-সকাল ৭টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটাররা। ইভিএম-এ ভোট দেওয়া নিয়ে এক ধরণের কৌতুহল কাজ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় নারী-পুরুষ ভোটাররা ভোট দিতে শুরু করেন। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে পুরুষদের চাইতে নারী ভোটারের ছিলো লাইন দীর্ঘ।
তাদের মাঝেও ছিলো বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। এ বার এই সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ওয়ার্ডসহ মোট ৪২টি ওয়ার্ডে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭২ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) ১ হাজার ৩৬৪টি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে মোট ২ হাজার ৬শ’ পুলিশ সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আশার খবর হচ্ছে দীর্ঘ ১০ বছর পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ফিরছে সিলেটের নগর ভবনে। বিএনপি এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে। বর্জন করেছেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। এ অবস্থায় সিলেটে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সাথে মেযর পদে যারা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন, তারা প্রতিযোগীতাই গড়ে তুলতে পরেননি। এর আগে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন অকাল প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি এতই জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন যে, ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে কারাগারে থেকে অংশগ্রহণ করলেও কেউ তার বিজয় ঠেকাতে পারেনি। তিনি জয় পেয়েছিলেন বিশাল ব্যবধানে। ওই নির্বাচনে তার সঙ্গে বিএনপি থেকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন প্রয়াত নেতা এমএ হক। এর আগে কামরান ১৯৯৫ সালে সিলেট পৌরসভার চেযারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভা সিটি করপোরেশনে উত্তীর্ণ হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন তিনি। ২০০৩ সালের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং বিএনপির প্রয়াত নেতা এমএ হককে পরাজিত করে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন কামরান। দুইবারের নির্বাচিত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গেলে নগরভবনে প্রায় বিশ বছরের কর্তৃত্ব হারায় আওয়ামী লীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও সামান্য ভোটের ব্যবধানে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। অবশ্য ওই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য আরিফের জনপ্রিয়তার চেয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দলকেই বেশি দাযী করেন সচেতন মহল। ২০২০ সালে মহামারি করোনায় তাঁর অকাল মৃত্যুর পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক বাঘা বাঘা নেতা কেন্দ্রে লবিং করতে থাকেন নৌকার মাঝি হতে। তবে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আস্তা রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উপর। মনোনয়ন ঘোষণার পর সিলেট আওয়ামী লীগে সমস্যা হতে পারে, ঐক্য নাও থাকতে পারে ইত্যাদি আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। মনোনয়ন যুদ্ধে পরাজিত নেতারাও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জন্য শেষ পর্যন্ত প্রচার যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন এবং এখন পর্যন্ত তারা সবাই নৌকার জন্য একাট্টা। মরিয়া হয়ে কাজ করেছেন। এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচন থেকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সরে দাঁড়ানোর পর নৌকা বা আনোযারুজ্জামান চৌধুরীর পথ অনেকটাই পরিস্কার হয়ে যায়। তখন থেকে প্রায় সবাই তার বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত মতামত দিতে থাকেন।
৭৫২ পড়েছেন