Sharing is caring!
আব্দুল হালিম সাগর : প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ গ্যাস। আমেরিকা আমাদের এই সম্পদ গ্যাস ক্রয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো আমাকে। কিন্তু আমি এতে রাজি হইনি। আমি বলেছি, আমার দেশের জনগণের কল্যানে এগুলো ব্যবহার করবো। ৫০ বছরের গ্যাস মজুত রেখে অবশিষ্ট থাকলে বিক্রি করবো । কিন্তু জনগণ যাদেরকে জনগণকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, সেই বিএনপি আমেরিকাকে গ্যাস বিক্রয়ের মুচলেকা দিয়ে আবার ক্ষমতায় যেতে চায়। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আল্লাহ জন বুঝে ধন দেন। বিএনপি ক্ষমতায় থাকালে যেসব স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে সেসব স্থানেই গ্যাসের সঙ্গে তেলও পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে উন্নয়নের জন্য নৌকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে বিপুল ব্যবধানে জয়যুক্ত করুন। কারণ, নৌকা স্বাধীনতার প্রতিক, নৌকা উন্নয়নের প্রতিক। এই নৌকায় চড়িয়েই সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতিকে রক্ষা করেছিলেন। বিএনপির আমলে মিললে এসব তারা লুটেপুটে খেতো, কিন্তু এসব সম্পদ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করছি। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে বক্তৃতা শুরু করেন। এর আগে ৩টা ১০ মিনিটে মঞ্চে পৌঁছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন অগ্নিসন্ত্রাসীদের দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। সাধারণ মানুষ ভোট চায়, উন্নয়ন চায়। আর তাই বিএনপি-জামায়াতের হরতাল অবরোধে তারা সাড়া দিচ্ছেন না। ইনশাল্লাহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও জনগন আমাদের ভোট দিয়ে নৌকাকে নির্বাচিত করবেন। তিনি দুপুর ১১টা ৩৩ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইটে সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এরপর হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার জিয়ারত ও দোয়া শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। পরে হয়রত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সার্কেট হাউজে বিশ্রামের জন্য চলে যান। এর আগে তিনি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে অভ্যর্থনা জানান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃৃবৃন্দ।

এসময় প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়, উন্নয়ন হয়। এই মুহুর্তে সিলেটে কোনো ঘরহীন বা ভূমিহীন মানুষ নেই। আমরা এভাবে জনগনের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। ইনশাল্লাহ, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য চাহিদাও পূরণ করা হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। তা ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন দেশের মানুষ আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। “যারা নির্বাচন করবে না, করবে না। কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ মারা। আগুন দিয়ে সরকারি সম্পত্তি এটা জনগণের সম্পত্তি। নতুন নতুন কোচ, নতুন রেল, সেই লাইন তুলে ফেলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করা। এটা তো সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কাজ, জঙ্গিবাদী কাজ। আর সেই সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট।”
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশ সংঘর্ষে পন্ড হয়ে গেলে পরদিন থেকে দফায় দফায় হরতাল-অবরোধের মত কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে তাদের এই কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। মঙ্গলবার ভোরে হরতাল শুরুর আগে ঢাকায় ঢোকার সময় নাশকতার শিকার হয় নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। ট্রেনের একটি বগিতে আগুন দেওয়া হলে তা আরও দুটি বগিতে ছড়ায়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভানোর পর এক মা ও তার শিশু সন্তানসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করেন। শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালেও একই কাজ করেছে। এবারও তারা হরতাল দিয়েছে, মানুষ তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি। “তাদের বোঝা উচিত, এদেশের মানুষ নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। কিন্তু সেখানে আমরা কী দেখলাম? রেলে আগুন দিল, একটা মা সন্তানকে নিয়ে সেই আগুনে পুড়ে মারা গেল। এর চেয়ে কষ্টের দৃশ্য আর হতে পারে না। নারী-শিশুর ওপর হামলা, জজ, সাংবাদিক, পুলিশের ওপর হামলা কোন ধরনের রাজনীতি?”

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বা রেল লাইন উপড়ে মা ও শিশুদের হত্যা বা অসহায় মানুষকে হত্যা করা-এ কেমন রাজনীতি। বাংলার মানুষ এমন হত্যার রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা নির্বাচন চায়, ভোট উৎসব চায়। তিনি বলেন, তারা মানুষ হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে ভিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন পন্ড করতে চায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,‘এই সিলেটে এখন আর ভূমিহীন মানুষ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই মানুষের উন্নয়নে কাজ করে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত শেষ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন। এসময় তিনি বলেন, আমার বার্তা একটাই সেটা দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। যে স্বপ্নটা আমার বাবা দেখিয়েছেন সেটাই করতে চাই। আর নির্বাচনী প্রচারকাজ শুরু করার জন্য এখানে এসেছি। আমার একটাই কথা, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ৭ জানুয়ারি, এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের সব চাহিদা পূরণ করা হবে। কেউ গৃহহীন থাকবে না, কারো দুঃখ থাকবে না।
কিন্তু ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তাদের এমন রাজনীতি দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। ২০১৮ সালেও তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভোট জনগনের অধিকার। ভোটে বা নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে জনগন তাদের উৎখাত করবে। অগ্নি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন ছোটো বোন শেখ রেহানা, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। বিকাল ৩ টায় প্রধানমন্ত্রী আলিয়া মাঠের জনসভায় বক্তব্য দিবেন।
এদিকে দুপুর একটায় কুরআন তেলোয়াতের মধ্যে জনসভা শুরু হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করছেন সিলেট মহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমেদ। পরিচালনায় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। জনসভায় সমর্থকদের মধ্যে কেউ কেউ পুরো শরীর জুড়ে নৌকা প্রতীক এঁকেছেন, কেউবা ছোট ছোট রঙিন নৌকা বানিয়ে মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়চ্ছেন। নৌকা নৌকা বলে দিচ্ছেন স্লোগান। বলছেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার। উন্নয়নের মার্কা নৌকা মার্কা, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে নেতা-কর্মীদের ভিড়। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে তারা জড়ো হচ্ছেন সিলেট নগরের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। মঞ্চ, সমাবেশস্থল ও আশপাশ এলাকায় উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগসহ অঙ্গসংগনের নেতাকর্মীদের মিছিল আসতে দেখা যায়। এ ছাড়া সিলেটের বিভিন্ন বাগানের চা শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জড়ো হচ্ছেন । এতে লোকে লোকারণ্য হচ্ছেন সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। এসব ছাড়াও হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলার স্থানীয় নেতাকর্মীরাও দলে দলে জড়ো হন জনসভায়। জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভাস্থল সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আসেন নেতাকর্মীরা। তাদের গানে মুখর হয়ে ওঠে সিলেট নগরী। সিলেট বিভাগের চার জেলায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের পাশাপাশি সিলেট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। জনসভা সফল করতে ও জনসমাগম ঘটাতে দলের পক্ষ থেকে জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মাইকিং, পোস্টার ও প্রচারপত্র বিলি করা হয়।
৫৪১ পড়েছেন