• ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৯শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জাফলং ধ্বংসকারী মন্ত্রীর লোক: জামাই সুমন-আলীম উদ্দিন-ফজুল-আলাই এখন কোথায়?

admin
প্রকাশিত আগস্ট ১৭, ২০২৪
জাফলং ধ্বংসকারী মন্ত্রীর লোক: জামাই সুমন-আলীম উদ্দিন-ফজুল-আলাই এখন কোথায়?

Sharing is caring!

আব্দুল হালিম সাগর জাফলং থেকে ফিরে: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং থেকে প্রতিদিন প্রায় অর্ধকোটি টাকার বালু-পাথর লুটকারী সাবেক মন্ত্রী ইমরানের লোক জামাই সুমন, আলীম উদ্দিন, ফজুল, আলা উদ্দিন উরফে আলাই এখন কোথায়? সরকার বদলের সাথে সাথে তারা গা ঢাকা দিলে জাফলংয়ে চলছে এখনো তাদের রাজত্ব। এই সিন্ডিকেট সদস্যরাই জাফলং এলাকায় নিজেরাই আইন তৈরী করে নিজেদের মতো চালিয়েছে লুটপাট। থানা যে ওসি-বা ইউএনও ছিলেন মন্ত্রী ইমরানই ওসি-ইউএনও’র সাথে ঐ সিন্ডিকেটকে মিট করিয়ে দিতেন বলে জনশ্রæতি রয়েছে।
যদিও জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে এডিসি, এসিল্যান্ড সকলেই বলেতেন জাফলং এলাকায় কোন বালু মহাল-ই নেই। কোনদিনই ডিসি অফিস থেকে কোন প্রকার ইজারা দেয়নি। কিন্তু সেখানে সাবেক মন্ত্রীর লোক পরিচয়ে ট্রাক শ্রমিকনেতা সমেদ, জামাই সুমন, আলীম উদ্দিন, ফয়জুল, আলা উদ্দিন মিলে খাবলে খেয়েছেন পুরো জাফলংকে।
সিলেট ৪ আসনের সংসদ সাবেক সরকারের মন্ত্রী ইমরান আহমদের লোক পরিচয়ে জাফলংয়ে অবৈধ বালুখেঁেকা সিন্ডিকেটের গডফাদার ছিলো জাফলং নয়াবস্তির বর্তমান বাসিন্ধা এক সময়ের বিস্কুট কোম্পানীর সেলসম্যান ইমরান হোসেন সুমন উরফে জামাই সুমন। এই সুমন নিজেকে আওয়ামী লীগের উপধর্ম বিষয়ক কমিটির সদস্য পরিচয় দিতো। ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হয়ে চালিয়ে যেতো জাফলং ধ্বংসের তান্ডবলিলা। তার সহযোগী নয়াবস্তির মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলীর ছেলে আলিম উদ্দিন। বিশ্বনাথের ফয়জুল ইসলাম উরফে বিশ্বনাথী ফয়জুল। ছাতকের আলাউদ্দিন আলাই, ট্রাক শ্রমিক নেতা সমেদ কোন রকম সরকারি অনুমোদন বা ইজারা ছাড়াই প্রকাশ্য অবৈধ বালু-পাথর করতো লুটপাট যা গত কয়েকদিন আগেও ছিলো অব্যাহত।
জাফলং নদীতে গেলেই চোখে পড়তো বালুবাহী হাজার হাজার কার্গো নৌকার সারি। জাফলং থেকে বালু নিয়ে ভাটিতে যাচ্ছে হাজার হাজার নৌকা। জাফলং ব্রিজসহ গোটা এলাকাই হচ্ছে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিও) হিসেবে চিহ্নিত করা হলে সরকারি সকল আদেশই তাদের কাছে ছিলো তুচ্ছ। সাবেক মন্ত্রী ইমরানের নামে গোয়াইনঘাট কলেজের শিক্ষক ফয়জুল, তার ভাই, সামছু, লেবু চেয়ারম্যানসহ চক্রটি ভাগবাটোয়ারা করে লুটপাট করতো জাফলংয়ে। জাফলংয়ের ইসিএ জোন থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকার বালু-পাথর লুটের মহোৎসবে মেতে উঠতো চক্রটি।
প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা ছাড়াও নিজস্ব স্বশস্ত্র ক্যাডারদের পাহারা বসিয়ে জাফলংয়ে জামাই সুমনের নেতৃত্বে রাতে-দিনের আলোতে চালানো হতো পরিবেশ বিনষ্টকারী ড্রেজার মেশিন। ফিরোজ মিয়া, শ্রমিক নেতা ছমেদ মিয়া, ফয়জুল মিয়া, সাবু মিয়া, কালা রকমত আলী, এসব বাহিনীর সদস্য। অবৈধ বালু-পাথর লুটকারীরা নিজেদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের নিজের লোক বলে পরিচয় দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে জিম্মী করে ফেলতো।
এনিয়ে স্থানীয় লোকজন সরাসরি প্রতিবাদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দীর্ঘদিন অভিযোগ, সাংবাদিক সম্মেলন করেও কোন সুফল পায়নি। স্থানীয়দের আরো অভিযোগ করেন, প্রশাসনকেই ০ম্যানেজ করেই জাফলং চা বাগান ও কান্দুবস্তি এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে এখনো। তাদের নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাফলং ব্রিজ। এ ছাড়া নয়াবস্তি ও কান্দুবস্তি নামের দুটি গ্রাম ও জাফলং চা বাগানও হুমকির মুখে রয়েছে। জাফলংয়ের বালু ও পাথর সিন্ডিকেটের সদস্যরা এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েই বালু লুটপাটে নেমেছে।
ইমরান হোসেন সুমন উরফে জামাই সুমন তিনি জাফলং এসে পূর্বে একটি বিস্কুট কোম্পানীর বা বেকারির সেলসম্যানের কাজ করতো। এখন সময়ের ব্যবধানে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক। তার সহযোগী বিশ্বনাথ এলাকার ফয়জুল তাকে সকলে চিনেন বিশ্বনাথী ফয়জুল হিসাবে। ফয়জুলের ভাই জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, তাই তার প্রভাবটাও একটু বেশী ছিলো। তাদের সহযোগী নয়াবস্তির ইনছান আলীর ছেলে একাধিক মামলায় বির্তকৃত আলীম উদ্দিন। এক সময় আলীম উদ্দিন ও জামাই সুমন দুটি গ্রæপে নেতৃত্ব দিতেন, ছিলো প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া। এ নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে খবর প্রচার হতো। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ লাখ টাকা করে গত ৩ মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বালু লুটপাট করেছে চক্রটি। তাছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার বালুবাহী কার্গো নৌকা চলাচলের কারণে জাফলং ব্রিজ, গোয়াইনঘাট ব্রিজ, সালুটিকর ব্রিজসহ শত শত কোটি টাকায় নির্মিত সেতু হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, জামাই সুমনই সিন্ডিকেটের মেইন গডফাদার। স্থানীয় সাংবাদিক ম্যানেজ, প্রশাসন ম্যানেজ, নেতা ম্যানেজ সবই করেন এই জামাই সুমন। জামাই সুমন হচ্ছে জাফলং এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামীরীগ নেতা লেবু মিয়ার ভাতিজী জামাই, তাই সকলের কাছেই তিনি জামাই সুমন হিসাবে পরিচিত। (চলমান)

৪৫৪ পড়েছেন