
মার্কিন ইতিহাসে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয় বিশালাকার এই দেশটি, যার মধ্যে দাবানল অন্যতম। দাবানল থেকে শুরু করে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়-টর্নেডো, বন্যা কিংবা ভূমিকম্প এসবের কারণে বহু প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু জায়গায় জীবনযাত্রা পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক শক্তি এতটাই বিশাল যে, তারা একসঙ্গে অভ্যন্তরীণ সংকট এবং আন্তর্জাতিকভাবে কৌশলগত কর্মকাণ্ড সমানতালে চালিয়ে যেতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্র ভয়াবহ দাবানলে বিপর্যস্ত। এর ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ সংকট আরও গভীরতর হয়েছে।
ধারনার চেয়ে অনেক ভয়ংকর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কিছুটা চাপ সামাল দিচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক এই শক্তিধর দেশটি।
তবে এই অভ্যন্তরীণ বিপর্যয় কি যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভূমিকা, মোড়লিপনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয়ার মতো কৌশলগত কর্মকাণ্ডে সাময়িকভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে? এই প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে অনেকের মনে। এর উত্তর হলো, তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েনি এই পরাশক্তির বিশ্বব্যাপী কর্মযজ্ঞে।
তাদের সামরিক বাজেট, কূটনৈতিক নীতিমালা এবং কৌশলগত স্থিতিশীলতা এতটাই সুদৃঢ় যে, শুধুমাত্র এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহজে তাদের বৈশ্বিক ভূমিকায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না।
অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলকে নির্লজ্জভাবে গণহত্যায় সমর্থন দেয়া এবং সামরিক সহায়তা দেয়ার মতো কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি মূলত কৌশলগত এবং রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে জড়িত। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের দীর্ঘদিনের সামরিক উপস্থিতি এবং দশকের পর দশক ধরে ইসরায়েলকে সহযোগিতার ইতিহাস বিষয়টিকে প্রমাণ করে। যদিও দেশটি বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বিপর্যয়ের মুখোমুখি, তবুও তাদের বৈশ্বিক অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কার্যক্রম এতটাই বহুমুখী এবং দক্ষ যে হোয়াইট হাউস সমানতালে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভূমিকা তাদের কৌশলগত নীতির আওতাধীন, যা একাধারে দেশটির অর্থনৈতিক স্বার্থ, সামরিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক প্রভাববলয় ধরে রাখার সঙ্গে সম্পর্কিত। ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দেয় শুধুমাত্র কৌশলগত স্বার্থের কারণে যেখানে তেলআবিব তাদের আরেকটি হাতিয়ার, যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাববলয় নিশ্চিত করা যায়। এর পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী যে, তারা একসঙ্গে নিজের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং বিশ্বব্যবস্থায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে সক্ষম। সেই সঙ্গে ইউরোপে রাশিয়ার প্রভাববলয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইউক্রেনকে সব ধরনের সমর্থন দেয়ার ক্ষেত্রে পেন্টাগন এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানলের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের ধ্বংসস্তূপের সঙ্গে তুলনা করেছেন ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ। তিনি একে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘বর্বরতার’ ফল বলে উল্লেখ করেছেন।
দেশটির সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেয়া একটি পোস্টে এ কথা বলেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর প্রতি সহানুভূতিও জানিয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসে গত মঙ্গলবার থেকে দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। যা হাজার হাজার একর জমি এবং অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া প্রায় দুই লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে এবং আরও দুই লাখ মানুষকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল গাজার পরিস্থিতির প্রতিফলন উল্লেখ করে জারিফ লিখেছেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য গাজায় বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি, স্কুল এবং হাসপাতালের দুঃসহ স্মৃতি জাগিয়ে তুলছে’।
জারিফের এই বক্তব্যটি এমন সময়ে এসেছে, যখন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৪৬ হাজারেরও ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ আব্দুল হালিম সাগর মোবাইল : ০১৭২২-০৬২২৭৪ প্রধান ফটো সাংবাদিক : কামাল হোসেন মিঠু অফিস :- ৪০৬ রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা) বন্দরবাজার সিলেট-৩১০০। ই-মেইল : halimshagor2011@gmail.com, sylhetage2022@gmail.com
All rights reserved © 2025 sylhetage.com