• ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা যাচ্ছে প্রবল প্রতিক্রিয়া,সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে চিঠিটি

admin
প্রকাশিত আগস্ট ৪, ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা যাচ্ছে প্রবল প্রতিক্রিয়া,সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে চিঠিটি

Sharing is caring!

ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে চিঠিটি। আর ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এ নিয়ে তোলপাড় চলছে পুরো নেট দুনিয়ায়। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনেও দেখা যাচ্ছে প্রবল প্রতিক্রিয়া।ভারতের রাজধানী দিল্লির পুলিশ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে ‘বাংলাদেশি ভাষার’ অনুবাদক চেয়েছে তারা।দিল্লির লোদী কলোনী থানার পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রেসিডেন্ট কমিশনার’-এর দপ্তর–বঙ্গভবনে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ৮ জন  সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছেন তারা। আটকদের কাছ থেকে এমন কিছু পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, যেগুলো ‘বাংলাদেশি ভাষায়’ লেখা এবং তার হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদ করা দরকার।এই কাজের জন্যই ‘বাংলাদেশি ভাষায় পারদর্শী একজন সরকারী অনুবাদক’ পাঠানোর জন্য দিল্লির বঙ্গ ভবনকে অনুরোধ করেছেন ওই থানার ওসি।বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে অভিহিত করার ঘটনায় চরম ক্ষেপেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও। চিঠিটির একটি ছবি প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেখুন, ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরাসরি অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ কীভাবে বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে বর্ণনা করছে! বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, যে ভাষায় আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গান লেখা হয়েছে, যে ভাষায় ভারতের কোটি কোটি মানুষ লেখেন এবং কথা বলে, যে ভাষাকে ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটিকেই এখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশি ভাষা!চিঠিটি প্রকাশ্যে আসতেই বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেন, এমন একটি সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’ বলছে, হিন্দি বলয়ের মানুষদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিকৃত একটা ধারণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বহু দিন ধরে যে, বাংলাটা বাংলাদেশের ভাষা, ভারতের নয় এবং যারা বাংলা বলেন তারা সবাই বাংলাদেশি। একইসঙ্গে হিন্দিকে ভারতের ‘জাতীয় ভাষা’ বলে ভ্রান্ত প্রচারণাও আছে ব্যাপকভাবেই। সেই মানসিকতারই প্রতিফলন দেখা গেছে দিল্লি পুলিশের এই চিঠিতে।বিষয়টিকে কলঙ্কজনক, অপমানজনক, দেশ-বিরোধী ও অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রী।ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ২২টি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। এর জন্য সংবিধান খতিয়ে না দেখলেও চলে। ভারতীয় টাকার একদিকে প্রতিটি স্বীকৃত ভাষায় ওই নোটের অঙ্ক উল্লেখ করা থাকে। সেখানে যেমন আছে হিন্দি এবং ইংরেজি, তেমনই আছে অসমীয়া, মারাঠি, পাঞ্জাবী, তামিল, তেলেগুর মতো প্রতিটি স্বীকৃতি ভাষারই উল্লেখ। ওই নোট দেখলেই দেখা যাবে যে সেখানে বাংলাতেও লেখা আছে।বাংলা পক্ষের প্রধান সংগঠক গর্গ চ্যাটার্জীর ভাষায়, বাঙালির প্রতি ঘৃণামূলক মানসিকতার ওপরে ভর করেই সারা ভারতে চরম অত্যাচার চালানো হচ্ছে হিন্দু- মুসলমান নির্বিশেষে ভারতের নাগরিক পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ওপরে। গণহত্যার দিকে একটা জাতিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ও বহুল ব্যবহৃত ‘দশটি ধাপ’-এর মানদণ্ড অনুযায়ী যদি মাপি, তাহলে ভারতের বাঙালি জাতি ইতোমধ্যেই তার ছয়টি ধাপ অতিক্রম করে ফেলেছে।এরপরও এক শ্রেণীর অ-বাংলাভাষী মানুষ নিয়মিতই বাংলাকে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ আখ্যা দিয়ে থাকেন। বাংলা ও বাঙালিদের জাত্যভিমান নিয়ে সরব সংগঠন ‘বাংলা পক্ষ’ বলছে যে, এটা বাঙালি-বিদ্বেষী মনোভাবের প্রতিফলন। বহুদিন ধরে এই ঘৃণার চাষ হয়েছে আর তার ফলেই এখন লিখিত ভাবে প্রকাশ করে ফেলছে। বাংলা ভাষার বহু উপভাষা আছে, কিন্তু বাংলাদেশি ভাষা বলে কোনো ভাষা নেই। ওই চিঠিতে বাংলাদেশি ভাষায় লিখিত হরফের কথা বলা হয়েছে। আমরা জানি, লিখিত হরফে সে বরিশাইল্যা হোক বা চাটগাঁইয়া বা বাঁকড়ি (পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কথ্য ভাষা) হোক – হরফের কোনো ফারাক নেই।

৫২ পড়েছেন