Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেটের জেলা প্রশাসক মো.সারওয়ার আলম ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম ও সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নেমেছেন নগরীর ‘ক্লিন মিশন’ নিয়ে। হাতে নিয়েছেন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিং কাজ। কৌশলী ‘মাস্টারপ্ল্যান’ নিয়ে এগোচ্ছেন এই তিনজন। এদিকে সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন সিলেট জেলা প্রশাসক সরোওয়ার আলম নিজেই। সিলেট নগরীর দীর্ঘদিনের যানজট, অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখল সমস্যায় নিরোসনে হকার্সদের পূর্নবাসন। অবৈধ বালু-পাথর লুট, নগরীসহ জেলার বিভিন্ন জবর দখলকৃত সরকারি জমি উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পরিবেশত মান উন্নয়নে প্রতিদিনই পরিদর্শণ করছেন বিভিন্ন হাসপাতাল। ছুটে যাচ্ছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজে বের করছেন বিভিন্ন সমস্যা, করছেন সমাধানের চেষ্টা। তদবিরবাজদের দিয়েছেন কঠোর হুশিয়ারী। নিজের বাসায় যে কাউকে তদবির নিয়ে যেতে স্পষ্ট মানা করে দিয়েছেন। প্রতি শুক্রবার হলে নগরীর বিভিন্ন মসজিদে যাচ্ছেন, মুসল্লিদের সহযোগীতার পাশপাশি নিজের কর্ম পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। আলোচিত ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর গঠনার তদন্ত কাজ মনিটরিং করার পাশাপাশি সিলেটের সব কয়টি পর্যটন এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেছেন। ডিসি মো.সারোয়ার আলম, দায়িত্ব নিয়েই তিনি নগরীর ফুটপাত ও রাজপথ দখলমুক্ত করতে হকার পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেন। লালদিঘীরপারে হকার্স মার্কেটকে প্রস্তুত করে সেখানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করছেন তিনি। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন রাজপথে কোনো ভাবেই হকার বসতে পারবে না। বাজারটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে গেলে সাঁড়াশি অভিযানে নামবে প্রশাসন। রাস্তায় হকার বসার কোন সুযোগ নেই। রাস্তা দখল করে, যানজট তৈরি করে ব্যবসা করার কোন সুযোগ আইনত নেই। এটা এই শহরের একটা বড় সমস্যা। হকারদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। হকারদের জন্য যে জায়গা তৈরি করেছি এটা তাদের জন্য একটি বোনাস। সিটি করপোরেশনের এই জায়গা আছে বলেই আমরা তাদের দিতে পারছি, এই জায়গা না থাকলেও হকারদের সড়ক ছাড়তে হতো। ফলে রাস্তায় ব্যবসা করার কোন সুযোগ নেই। এখানে না আসলেও রাস্তা ছাড়তে হবে। “নগরীর উন্নয়ন হবে, তবে তা হবে টেকসই। রাস্তা-ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করার সুযোগ আর দেওয়া হবে না। জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেছেন, সরকারের প্রতিটি দপ্তর একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোন একটি দপ্তরের সেবায় বিঘ্ন ঘটলে তা সামগ্রিক সিস্টেমে প্রভাব ফেলে। কাজেই সরকারের প্রতিটি দপ্তরকে একতাবদ্ধ হয়ে একসূত্রে কাজ করতে হবে। সবাই মিলেই একটি সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব সিলেট গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি দপ্তরের মধ্যে কানেক্টিভিটি বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, কাজেই জনগণকে যথাযথ ভাবে সেবা প্রদান করা আবশ্যিক দায়িত্ব। আধুনিক ও স্বয়ংস্বম্পূর্ণ সিলেট গড়ে তুলতে শিক্ষার পাশাপাশি কৃষি ও মৎস্য খাতে উন্নয়নের উপর জোর দেন তিনি। এছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো আরো আকর্ষণীয় করতে কার্যকর পদক্ষেপের কথা বলেন। পরিশেষে সিলেট শহরকে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করার পাশাপাশি সকলকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। তবে সঠিক মতো কাজ করতে গিয়ে পরপর দুটি শোকজ নোটিশ দিয়ে তার চলমান কাজকে বাধা গ্রস্থ করতে একটি চক্র কাজ করে গেলে তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না। নিজের অবস্থানে অনড় থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
অপরদিকে সিলেট মহানগর পুলিশের নতুন কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী, দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কঠোর অবস্থানে থেকে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। পাশাপাশি সিলেটের সকল অপরাধ দূর্গে দিচ্ছেন হানা। এখন ৮ নির্দেশনা নিয়ে চলছে এসএমপির সাড়াসি অভিযান। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে অবৈধ যান সরাসরি ডাম্পিং করা হয়। এদিকে নগরীর যানজট কমাতে এসএমপি ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে মহানগরে ৩০টি বৈধ সিএনজি ও লেগুনা স্ট্যান্ড নির্ধারণ করেছে। এসব বৈধ স্ট্যান্ড ছাড়া অন্য কোথাও কোনো যানবাহন দাঁড়ালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‘অন্যদিকে কমিশনার কুদ্দুছ চৌধুরীর ঘোষণা,“অবৈধ যানবাহন সড়ক থেকে সরাতে সময় দেওয়া হয়েছিল। এখন আর ছাড় নয় শৃঙ্খলা ফেরাতেই কঠোর অভিযান চলছে।”সদ্য যোগ দেওয়া এই দুই কর্মকর্তা নগরীর ভোগান্তি কমানো ও শৃঙ্খলাবদ্ধ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আন্তরিকভাবে কাজ শুরু করেছেন। তাদের দৃঢ় অবস্থান নগরবাসীর মাঝে আশার সঞ্চার করেছে যে সিলেট আবারও সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরীতে রূপ নেবে। নগরীর যানজট সমস্যা নিরসন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ঘোষিত আল্টিমেটামের সময় অনুযায়ী অ্যাকশনে নামে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। অবৈধ যানবাহন ও অনিবন্ধিত গাড়ি চলাচল বন্ধ এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে চলে এই অভিযান। তবে পুনর্বাসন কাজে বর্ধিত সময়ের কারণে আপাতত সময় পাচ্ছেন ভাসমান হকাররা। এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে এসএমপির ট্রাফিক, ক্রাইমসহ বিভিন্ন ইউনিট। সমন্বিত এই অভিযানের আগেই সতর্কতাজারী করে সময় দেওয়া হয়ে ছিলো। এই অভিযানে রয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশের আটটি নির্দেশনা। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে যানজটমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে সিলেট মহানগরীতে কোনো ব্যাটারি চালিত রিকশা রেজিস্ট্রেশন বিহীন বা ভূয়া নম্বর প্লেটযুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। অনুমোদিত স্ট্যান্ডে নির্ধারিত সংখ্যার বেশি সিএনজি চালিত অটোরিকশা রাখা যাবে না। অনুমোদনবিহীন ও অননুমোদিত স্থানে কোনো ধরনের পার্কিং করা যাবে না। মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়কেই বাধ্যতামূলক ভাবে হেলমেট পরিধান করতে হবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি প্রবেশ করতে পারবে না। বাস, মিনিবাস, কোচ, কার, মাইক্রোবাস ও হাইয়েসের চালকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ও সিটবেল্ট ছাড়া গাড়ি চালাতে পারবেন না। কোনো পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। এছাড়া হেডলাইট, ব্রেক লাইট ও সিগন্যাল লাইট সঠিক ভাবে সচল না থাকলে গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না। সিলেট শহরের ভেতরে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো বা রাস্তার মাঝে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। এ নির্দেশনার আলোকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা চলবে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে। নগরীর সম্মানিত নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কোনোভাবেই নগরীতে অনুমোদনবিহীন, কাগজপত্র ছাড়া বা নিয়ম অমান্যকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। নগরীতে বেপরোয়াভাবে চলাচলকারী অটোরিকশার লাগাম টেনে ধরতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাবিরোধী অভিযান শুরু করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। সিলেট নগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। মূল সড়কে অটোরিকশা চলাচলে নাগরিক বিড়ম্বনার পাশাপাশি বিপদে পড়ছে অন্য যানবাহনগুলো। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র ব্যতীত গণপরিবহন চালাতে বা চালাবার অনুমতি দিতে পারবেন না। কিন্তু সিলেটে অটোরিকশা চলাচল কোনও নীতিমালার মধ্যে পড়ছে না। সিলেট নগরীর বাসিন্দারা বলছেন, পঙ্খিরাজের মতো তাদের গতিবিধি দেখলে উল্টো মনে ভয় জাগে, আতঙ্কিত থাকতে হয় গন্তব্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যাত্রীদের। স্থানীয় সড়কগুলোর পাশাপাশি মূল সড়কেও দাপট অটোরিকশা চালকদের। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে তারা কোনও নিয়ম মানে না। হুট করে উঠে আসছে মূল সড়কে। চলে উল্টোপথেও। অনেক চালক বেপরোয়া গতিতে চালান। ফলে প্রতিদিন নগরীর ভেতর ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও প্রশিক্ষণ না থাকায় অটোরিকশা চালকদের আচরণও মারমুখী। অনেক ক্ষেত্রে তারা যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করছেন অতিরিক্ত ভাড়া। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার ঈদেই ৩২ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ব্যাটারিচালিত রিকশায়। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৪, ২০১৭ ও ২০২১ সালে ৩ দফা হাইকোর্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধ করলেও এসবের সংখ্যা না কমে বরং বাড়তে থাকে। সবশেষ গত বছর নভেম্বরে হাইকোর্ট আবারও তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। এসএমপি কমিশনার জানান, নগরীর সম্মানিত নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কোনোভাবেই নগরীতে অনুমোদনবিহীন, কাগজপত্র ছাড়া বা নিয়ম অমান্যকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত সপ্তাহের সোমবার থেকে নগরীতে চলাচল করা অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারি চালিত যানবাহন ও চোরাই গাড়ি ডাম্পিংয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে এক নাম্বারে চলা একাধিক সিএনজি অটোরিকশাগুলোও ডাম্পিং করা হচ্ছে। এই অভিযান অব্যহত থাকবে বলে তিনি জানান।
এদিকে সিলেট নগরীতে চলমান ব্যাটারিচালিত রিকশা ও হকার উচ্ছেদ অভিযানে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সিলেট নগরীর চৌহাট্টা ও জিন্দাবাজার এলাকায় এ অভিযানে সরাসরি অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অভিযান চলাকালে তিনি ঘোষণা দেন, “নগরবাসীর শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বসবাস নিশ্চিত করতে হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। হকার ও ব্যাটারিচালিত রিকশা এই দুই-ই নগরজীবনের বড় প্রতিবন্ধক।” আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, “নগরীর মানুষ শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদভাবে বসবাস করতে চায়। এ দাবির বিপরীতে যদি কোনো রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী শক্তি কাজ করে, তবে নগরবাসী তার দাঁতভাঙা জবাব দেবে। হকার ও অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে নগর ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আসবে না। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাস্তায় থাকব, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”এদিকে, হকার উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে নগরীতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার অনেকেই জীবিকার দিক বিবেচনা করে মানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
৫০ পড়েছেন