Sharing is caring!
স্টাফ রির্পোটার: সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ জন চিকিৎসক বছরের পর বছর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাদের এই অনুপস্থিতির বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও কোন সুফল মিলছেনা। অনুপস্থিত চিকিৎসকরা কবে ফিরবেন তাও জানাতে পারছেনা কেউ। এছাড়াও এই হাসপাতালের ২৭ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মস্থলে আছেন মাত্র ৫জন। বর্তমানে এমতাবস্থায় রয়েছে বিয়ানীবাজারের চিকিৎসা ব্যবস্থা। সিলেটের জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জনসহ সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এমন হাল সামনে আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজারে ২৭টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে আছেন মাত্র ৫ জন চিকিৎসক। এরমধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ১জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১জন ও ৩জন কন্সালটেন্ট আছেন। তবে কন্সালটেন্টরা আবার আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন না। তারা অপারেশন হলেই কেবল দায়িত্ব পালনে সম্মত হন। সে হিসেবে উপজেলার প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবায় আছেন একজন ডাক্তার। বিয়ানীবাজার উপজেলায় এই অবস্থা চলছে প্রায় ৩ বছর থেকে। এরমধ্যে অনেক চিকিৎসক এসেছেন, যোগদান করেই আবার বদলী হয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শেগুফতা শারমিন ২০১০ সালের ১ জুলাই যোগদান করেন। তিনি ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে একটানা অনুপস্থিত রয়েছেন। ১৪ বছর থেকে তিনি অনুপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জুবায়ের আহমদ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ১ মে থেকে অনুপস্থিত। ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তানভীরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ৫ জুলাই থেকে হাসপাতালে আসেন নি। মেডিকেল অফিসার ডা. মোছা. রাবিয়া বেগম ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ডা. মো: নাজমুল সাকিবের দেখা নেই ৩ বছর থেকে। অনুপস্থিত এই চিকিৎসকরা কোথায় আছেন, কেউ জানেন না। অনেকে বলছেন, তারা উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। উচ্চতর শিক্ষা ও উন্নত কর্ম পরিবেশের অভাব ও রাজনৈতিক কারণসহ নানা কারণে পদায়ন হওয়ার পরও কর্মস্থলে যোগদান করেননি বহু চিকিৎসক। অনুপস্থিত থাকা এসব চিকিৎসকের মধ্যে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক ছাড়াও শিক্ষা ছুটি, অন্যত্র যুক্ত হওয়া, পছন্দমতো কর্মস্থল না পাওয়ার মতো কারণও রয়েছে। এমনকি বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেই নতুন কর্মস্থলের জন্য সুপারিশ করার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.মনিরুল হক খান জানান, ‘কয়েকজন চিকিৎসক ওএসডি। কিছু বদলী আবার কয়েকজন অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে।’ সিলেটের সিভিল সার্জন ড: নাসির উদ্দিন বলেন,‘অনুপস্থিত চিকিৎসকদের দফায়-দফায় চিঠিপত্র প্রেরণ করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কি করার আছে? আমাদের কাছে যেসব রিপোর্ট আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হচ্ছে।’ গত সোমবার বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মো: সারওয়ার আলম বলেন, ‘অনুপস্থিত চিকিৎসকের বিষয়ে আর ছাড় দেয়া হবেনা। যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। খারাপ পোস্টিং হয়েছে দাবি করে অনেকে কর্মস্থলে যেতে চায় না। এখন সেই সময় নেই। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’
৩৭ পড়েছেন