Sharing is caring!
স্টাফ রির্পোটার: সিলেট নগরীতে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি দীর্ঘদিনের। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন প্রতি কিলোমিটারে রিকশা ভাড়া নির্ধারিত না থাকায় যেখানে-সেখানে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন করে রিকশাচালকরা। নগরীতে লাগামহীন রিকশা ভাড়ার রশি টেনে ধরতে সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও মানছেন না কেউই। রিকশা ভাড়া কার্যকরে সিসিকের কোনো উদ্যোগ না থাকায় নগরবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নগরীর রিকশা চালকরা বলেছেন, সিসিকের এই তালিকা অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হলে, পরিবার-পরিজনকে না খেয়ে মরতে হবে। আর সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, সিসিকের নির্ধারণ করা ভাড়ার তালিকায় যাত্রীদের স্বার্থরক্ষা হয়নি। ভাড়ার পরিমান বেশি ধরা হয়েছে। এরপরও নির্ধারিত ভাড়া কার্যকরে উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তারা।
একই চিত্র সিএনজিতেও। যেকোনো গন্তব্যে উঠলেই ভাড়া শুরু হয় ১০০ টাকা থেকে। বৃষ্টি বা রাতের বেলা হলে ভাড়া আরও বেড়ে যায়। অনেক যাত্রী জানিয়েছেন, কিছু সিএনজি চালক যাত্রার আগে ভাড়া ঠিক করলেও গন্তব্যে গিয়ে বাড়তি ভাড়া দাবি করেন। প্রতিবাদ করলে বাকবিতণ্ডা বা অশালীন আচরণের শিকার হতে হয়। তবে সব চালক নয় নগরীর অনেক চালক নিয়ম মেনে ভাড়া নেন বলেও জানিয়েছেন যাত্রীরা। ২০১৫ সালে সিটি কর্পোরেশন নগরের ৫১টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রিকশাভাড়ার তালিকা টানিয়েছিল। নগরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন রিকশা ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে এই কমিটির সদস্যরা কউন্সিলর, রিকশাচালক, মালিক ও যাত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে রিকশা ভাড়ার নতুন তালিকা নির্ধারণ করেন। কিন্তু চালকদের অনীহা ও নজরদারির অভাবে সেই তালিকা কার্যকর হয়নি। দশ বছর পরও এ উদ্যোগের সুফল মেলেনি। মজুমদারী এলাকার বাসিন্দা রফিক আহমদ বলেন, “বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে বৃষ্টির সময় জিন্দাবাজার থেকে মজুমদারী আসার জন্য সিএনজি খুঁজছিলাম। ভাড়া চাইলো ২০০ টাকা। পরে অন্য একজন স্বাভাবিক ভাড়ায় নিয়ে গেলো। সমস্যা হলো যাত্রীরা জানেই না কোন রুটে আসলে কত ভাড়া হওয়ার কথা।”অন্যদিকে মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগম বলেন, “রিকশায় উঠার আগে ৪০ টাকা ভাড়া ঠিক করেছিলাম। কিন্তু নামার সময় চালক ৫০ টাকা দাবি করেন। এমনটা প্রায়ই হয়।”করোনাকালে নগরীর বিভিন্ন স্ট্যান্ডের সিএনজি চালকেরা যাত্রী সীমিত করার অজুহাতে একদফা ভাড়া বাড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে নিয়ম শিথিল হলে যাত্রী আগের মতো ৫ জন নিলেও আগের ভাড়া আর কমানো হয়নি। ফলে যাত্রীরা মনে করছেন, ভাড়া বাড়ানো এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরে চালকের পাশে একজন যাত্রী নেয়ার নির্দেশনা আসলে, সে অজুহাতেও আরেকদফা ভাড়া বাড়ানো হয়। অথচ এখন ফের ৫ জন যাত্রী নিয়ে চললেও ভাড়া বাড়তিই রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে এবার নগরীর প্রতিটি রুটে সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া তালিকা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগ দেয়া আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী এই ঘোষণা দিয়েছেন। সিলেট মহানগর এলাকায় সিএনজিচালিত থ্রি হুইলার যানবাহনের ভাড়া নির্ধারণ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসএমপি কমিশনার জানান, কিছু এলাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া নেওয়া এবং অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠার অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে স্বস্তি দিতে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা একটি ন্যায্য ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করতে চাই, যাতে জনগণ জানতে পারে কোন রুটে কত ভাড়া। এতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধ করা সম্ভব হবে এবং একটি শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। তবে নগরবাসীর দাবি, শুধু সিএনজি অটোরিকশা নয়, রিকশার ভাড়াও তালিকাভূক্ত করতে হবে। তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশনের পূর্বের উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ার কারণেই এই নৈরাজ্য চলমান। তারা মনে করেন, কেবল ভাড়ার তালিকা বানানোই যথেষ্ট নয় পুলিশ ও সিসিকের তদারকি ছাড়া এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
৪২ পড়েছেন