Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিনিধি: একদিকে তীব্র তাপদাহ অন্যদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন আর প্রচন্ড গরমেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে সিসিক নির্বাচন। তীব্র গরমেও জনজীবন থমকে গেলেও থেমে নেই নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা। রাতদিন প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দোয়ারে-দোয়ারে। অনেক আগ থেকেই প্রচারণা চললেও ২ জুন প্রতিক পাওয়ার পর পরই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। সিলেট নগরজুড়ে সাঁটানো হচ্ছে ব্যানার ও ফেস্টুন। চলছে মাইকিংও। নানা রকম ভাবে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অলিগলিসহ সর্বত্র মিছিলে মিছিলে সরগরম পুরো সিলেট নগরী। তবে মাইকিংয়ে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় বাঁধা থাকলেও তা মানছেন না অনেক প্রার্থী। বিশেষ করে বিভিন্ন অলিগলি এবং শহরতলীর ওয়ার্ডগুলোতে রাত ১০ থেকে ১১টা পর্যন্ত মাইকিংয়ের শব্দ পাওয়া গেছে। মূল শহর ও বড়ো বড়ো রাস্তায় মেয়র প্রার্থীদের গণসংযোগ ও প্রচারণা বেশি থাকলেও পাড়া মহল্লা ও অলিগলিতে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা প্রচারণায় সরগরম বেশি। ছেলে বুড়ো থেকে নিয়ে সবার মাঝে নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বাস দেখো গেছে। অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য রেখেও পছন্দের প্রার্থীদের প্রচারণায় বেড়িয়ে পড়েছেন। তবে দু একটি ওয়ার্ডে বিপক্ষ প্রার্থীদের প্রচারণায় ব্যস্ত সমর্থকদের হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
তীব্র গরমে তবুও চলছে প্রচারণা। নগরীর পাড়া মহল্লা ছাড়াও বিভিন্ন মার্কেটে গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী (নৌকা প্রতীকের) আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আনোয়ারুজ্জামান বলছেন, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্যবসায়ীদের সম্মান করি। আওয়ামীলীগ ব্যবসায়ী বান্ধব সরকার। ব্যবসায়ীদের যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে সব সময় পাশে পাবেন। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেটের ব্যবসায়ীদের কল্যাণে সব সময় কাজ করে যাব। একটি আধুনিক স্মার্ট সিটি গড়তে আমি সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করবো।
গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ও সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক (লাঙ্গল প্রতিকের) নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি বলছেন সুষ্ঠ নির্বাচন হলে লাঙ্গলের বিজয় কেউ রুখতে পারবে না। তবে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। নির্বাচনে আমি কাউকে প্রতিপক্ষ ভাবছি না। জনগণ বিচার করবে কে আগামীতে নগরের সেবক হবেন। তবে আমার বিশ্বাস এই নগরবাসী আর ফাঁকা বুলিতে বিশ্বাস করবে না। আমার দল বা আমি কখনো সন্ত্রাসী পুষিনা। আমি সন্ত্রাসবাঁধে বিশ্বাসী নই, কারা সন্ত্রাসী করে সেটা জনগনই ভালো জানে। তিনি পরিচ্ছন্ন ও নান্দনিক নগরী গড়ার লক্ষ্যে আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করার জন্য ব্যবসায়ী সহ নগরবাসীর কাছে আহবান জানান।
গণসংযোগ করছেন হাতপাখা মার্কার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সমর্থকরা। শহরকে সুন্দর করে সাজানোর আধুনিক পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে মাহমুদুল হাসান বলছেন, আমি যদি আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতায় নির্বাচিত হতে পারি তাহলে সিলেট শহরকে উন্নত বিশ্বের আদলে একটি পরিপূর্ণ আধুনিক উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।
এবারের সিলেট সিটি নির্বাচনে নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসান (হাতপাখা), জাকের পার্টির জহিরুল আলম (গোলাপ ফুল), স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ছালাহ উদ্দিন রিমন (ক্রিকেট ব্যাট), মোহাম্মদ আবদুল হানিফ (ঘোড়া) এবং মো. শাহ জাহান মিয়া (বাস গাড়ি)।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সিসিক নির্বাচনে চ‚ড়ান্ত লড়াইয়ে মোট ৭ জন মেয়র এবং ৩৭২ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। আগামী ২১শে জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। যেখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটক ১ হাজার ৩৬৪টি। ২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিলেটের সকল ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে।
ব্যস্ত নারী প্রার্থীরা: প্রচারণায় থেমে নেই নারী প্রার্থীরাও। এবারের নির্বাচনে ৮৮ নারী প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এরমধ্যে একটি ওয়ার্ডে সরাসরি সাধারণ আসনে নির্বাচন করছেন রোকসানা বেগম শাহনাজ। তিনি ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এর বাইরে ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৭ নারী প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন।
সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ নারী প্রার্থীরা হলেন: ১ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা ও আছিয়া বেগম। ২ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর কুলসুমা বেগম পপি, রুনা বেগম, জোসনা আহমদ, তাহমিনা রহমান রোবা। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রেবেকা বেগম রেনু, রোবি বেগম, নেহারুন বেগম, শ্যামলী সরকার, মুসলিমা নাজনিন হাসান, নাছরি আহমদ নুপুর ও রুকসানা খানম। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাসুদা সুলতানা, সাবেক কাউন্সিলর রুহেনা খানম মুক্তা, উম্মে সালমা, অ্যাডভোকেট জোহরা জেসমিন, তাহমিনা বেগম, রুবি বেগম, সালমা বেগম, সু-নয়া আক্তার সূচনা ও রুপিয়া খানম। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু, সাবেক কাউন্সিলর দীবা রানী দে, জয়শ্রী দাস জয়া। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শাহানারা বেগম ও মোছা. কামরুন নাহার চৌধুরী। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর নাজনীন আক্তার কনা, মাহমুদা নাজিম রুবি, নার্গিস সুলতানা ও ডায়না বেগম সুমাইয়া। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রেবেকা আক্তার লাকী, সাবেক কাউন্সিলর সালেহা কবীর সেপী, শারমিন আক্তার রুবি ও হেনা বেগম। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাদিয়া শারমিন সুমি, নাজমা বেগম, শিউলি আক্তার, ছামিরুন নেছা ও আছমা বেগম। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে হাছিনা বেগম, রুমা আক্তার, আয়েশা খাতুন কলি, হোছনে আরা বেগম, অর্পনা রানী ঘোষ, জুলেখা বেগম, মাহমুদা ইসলাম চৌধুরী ও তাহমিনা সুলতানা। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সাজেদা বেগম, খেলা রাণী নাথ, ফাতেমা বেগম সাথী, রাহেলা বেগম, রোপসানা আক্তার, রুকসানা বেগম, পারবিন বেগম, মাজরানা তাহরীন খালিক ও আমিনা বেগম। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ছালেহা বেগম, আছমা আক্তার পারভীন, হাজেরা বেগম, নাজমা আক্তার, ফাতেমা আক্তার পারুল, রুমি আহমদ, শিরিন আক্তার, সেলিনা আক্তার ও লিপি বেগম। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ফাতেমা বেগম, নেখবুল বেগম, রেজিয়া বেগম, ডলি বেগম, লাভলী বেগম, খালেদা আক্তার শাপলা, শিউলী পারভীন, কুলসুমা বেগম তাহমিনা, শোভা আক্তার, রেসমা বেগম, জলি পুরকায়স্থ ও শেখ তাসলিমা আলী হেনা। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নুরজাহান বেগম, সুবিনা বেগম সুবনা।
৭২৭ পড়েছেন