Sharing is caring!
স্টাফ রির্পোটার : সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী রুচি হোটেলের সামন থেকে আলীম উদ্দিন (২৬) নামে এক যুবকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করে উত্তর সুরমার জালালাবাদ থানাধিন মদিনা মার্কেট এলাকায় নিয়ে একটি গ্যারেজে আটক করে রাতভর নির্যাতন করে প্রায় ২লাখ ৩৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গত ৩১ আগষ্ট দিবাগত রাতে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন অপহৃত যুবক আলিম উদ্দিন (২৬)।
দক্ষিণ সুরমা থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ থানার ডুংরিয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আলীম উদ্দিনের সাথে আগেই পরিচয় হয় শহরতলির আখালিয়া এলাকার লিটন (৪৫) এর সহিত। সেই সুবাধে লিটন আলীম উদ্দিনকে বিদেশ পাঠানোর জন্য ৩/৪ লাখ টাকা সংগ্রহ করতে বলেন। গত ৩০/৮/২০২৩ ইং তারিখে লিটনের কথামতো আলীম উদ্দীন ৩৫ হাজার টাকা সাথে নিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটে আসেন পাসপোর্ট করতে। পাসপোর্ট করতে গেলে লিটন জানায়, আলীম উদ্দিনের ভোটার আইডি কার্ডে সমস্য রয়েছে। তা আগে সংশোধন করতে হবে। ঐ দিন পাসপোর্ট করতে না পারায় আলীম উদ্দিন দক্ষিণ সুরমা থানার গোটাটিকর এলাকায় তার ফুফুর বাসায় থেকে যান।
ঐদিন সন্ধ্যা অনুমান ৭টার দিকে লিটনের কথামতো আলীম উদ্দিনকে মুক্তার আলী নামক একব্যক্তি গোটাটিকর থেকে কদমতলী রুচি হোটেলের সামনে লিটনের কাছে নিয়ে আসেন। সেখানে যাওয়ার সাথে-সাথে একটি সিএনজি যোগে ৫/৬ জন ও ১টি মোটর সাইকেল নিয়ে আরো দুজন লোক আসেন। তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বলে আলীম উদ্দিনের নামে থানায় মামলা রয়েছে। সেই মামলায় ওয়ারেন্টের আসামী আলীম উদ্দিন। এই বলে জোরপূর্বক আলীম উদ্দিনকে সিএনজিতে তুলে নেয় এ সময় লিটন ও মুক্তার একটি মটর সাইকেল যোগে চলে যায়। অপরহণকারিরা আলীম উদ্দিনকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে মদিনা মার্কেট এলাকার একটি জনশূন্য গ্যারেজ দোকানে নিয়ে যায়।
সেখানে যাওয়া মাত্রই অজ্ঞাতনামা ঐ সাত লোক আলীম উদ্দিনের কাছ থেকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা। সাথে থাকা একটি ভিভো টার্চমোবাইল নিয়ে নেয়। কিছু সময় পর অপহরণকারীগণ মুক্তিপন দাবী শুরু করে আলীমকে বিকাশের মাধ্যমে বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলে। না হয় তাকে প্রাণে হত্যা করে ফেলবে। প্রাণ রক্ষার ভয়ে আলীম উদ্দিন তার পিতার সাথে কথা বলে আরো ২০ হাজার টাকা। পার্সনাল বিকাশ নাম্বারে আনাতে বাধ্য হন। ঐ ২০ হাজার টাকা অপহরণকারীগণ মদিনা মার্কেটের বিকাশ এজেন্টের একটি দোকানে গিয়ে ০১৭১১-৯৫৫০২১ নাম্বারে সেন্ডমানির মাধ্যমে নিয়ে নেয়। রাত অনুমান ১১টার দিকে অপহরণকারীগণ আবারও বাঁশের লাটি, লোহার পাইপ দিয়ে আলীম উদ্দিনকে নির্যাতন শুরু করে আরো ২ লাখ টাকা তাদের মুক্তপণ দিতে। নতুবা তাকে রাতেই হত্যা করে ফেলবে আর অপহরণের বিষয়টি পুলিশ কিংবা আইনশৃংখলা বাহিনীর কাউকে জানালে তারা আলীমকে প্রাণে হত্যা করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। নিজের অপহৃত ভাইকে বাঁচাতে ঐ রাতে ভোর ৬ টার দিকে আলীম উদ্দিনের বড় ভাই বাবুল মিয়া (৩৫) বাড়ি থেকে আরো ২ লক্ষ টাকা এনে ১নং অভিযুক্ত বিবাদী লিটনের হাতে তুলে দেন। এ সময় লিটন আলীম উদ্দিনের ভাই বাবুলকে হুমকি দিয়ে বলে অপহরণকারীরা তোমার ভাইকে ছেড়ে দিবে, তবে মুক্তিপণের বিষয় নিয়ে কোন প্রকার আইনি প্রদক্ষেপ নিলে। তোমার ভাই সহ তোমাকে এবং তোমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণে হত্যা করা হবে।অপহরণকারীদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে আলীম উদ্দিন বাড়িতে গিয়ে পবিবার ও আত্মীয় স্বজনের সাথে পরামর্শ করে পরদিন ৩১ আগষ্ট রাতেই অপহরণকারীদের হোতা লিটন ও মুক্তার আলীর নাম উল্লেখসহ আরো ৭জন অপহরণকারীর নামে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। থানার অফিসার ইনচার্জ সামছুদ্দোহা আলীম উদ্দিনের এজাহারটি আমলে নিয়ে কদমতলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেনকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব প্রদান করেন।
এসআই আবুল হোসেন জানান, এজাহারটি আমি তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে শুক্রবার দিনেই সরেজমিন ঘটনাস্থলে তদন্তকালে অপহরণ ও মুক্তিপনের বিষয়টির সত্যতা পাই। এছাড়া আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাই। রাতে ওসি স্যারের সাথে আলাপ আলোচনা করে এজাহারটি মামলা হিসাবে রেকর্ড ভুক্ত করা হবে।
৪৫১ পড়েছেন