Sharing is caring!
বিশেষ প্রতিনিধি গোয়াইনঘাট থেকে ফিরে : সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের চোরাকারবারীদের কোন ভাবে ধমন করতে পারছেনা স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। উপজেলার ২নং পশ্চিম জাফলং ও ১১নং মধ্য জাফলং ইউনিয়নের ২২টি সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে প্রতিদিন আসছে ভারতীয় হরেক রকম পণ্য। থানা পুলিশ প্রতিমাসে লাইনম্যানদের কাছে সীমান্ত এলাকা অলিখিত ভাবে ইজারা দিয়ে থাকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। ফলে এ নিয়ে থানা পুলিশের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা ডিবি উত্তর (গোয়েন্দা) শাখার ওসি ইকবালের নামে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে সাবেক সেচ্চাসেবক দলের ক্যাডার কালা মিয়া উরফে শ্যামকালা। ডিবির লাইনম্যান হিসাবে পরিচিত কালা পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাতিরখাল গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। এক সময় সরাসরি সেচ্চাসেবক দলের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। নিজেকে আড়াল করে রাখতে ফেইসবুকে সেড কালা নামে একাউন্ট খোলে সরকার বিরোধী নানা রকম অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে শ্যামকালা। পরিবারে পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে কালা দ্বিতীয়। জন্মসূত্রে দারিদ্রতার করাঘাতে বেড়ে উঠা কালা মিয়ার শৈশব শুরু হয় পিতার সাথে কাজের যোগান দিয়ে। পরবর্তীতে বারকী শ্রমিক হিসেবে পাথর উত্তোলনের কাজ করতো সে। অথচ জেলা ডিবির উত্তরের সাবেক ওসি রেফায়াত ও বর্তমান ওসি ইকবাল হোসেন এই কালাকে দিচ্ছেন প্রশাসনিক শেল্টার। নিয়োগ দিয়েছেন নিজের বখরা আদায়ের লাইনম্যান হিসাবে। শুধু ডিবি পুলিশের নামেই চাঁদাবাজি করে রাজকীয় বিলাস বহুল জীবন যাপন করছে কালা। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জন্য গড়ে তুলেছে একাধিক ভাড়াটে লাঠিয়াল বাহিনী। চাঁদাবাজ পুলিশের লাইনম্যান শ্যাম কালা এখন গোয়াইনঘাটে অপ্রতিরুদ্ধ একটি নাম।
গত ৮ জুলাই রাতে ডিবি’র পুলিশের উত্তর জোনে দায়িত্বরত এসআই নোটন ও এসআই ইয়াকুব সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে গোয়াইনঘাট থানার রাধানগর জলুরমুখ এলাকার গোয়াইন নদীতে ভারতীয় চোরাই পণ্যসহ একটি নৌকা আটক করে। এ সময় নৌকায় থাকা মাঝিসহ চোরাকারবারীরা পালিয়ে গেলেও নৌকাটি হেফাজতে নেয় ডিবি পুরিশ। তখন জব্দ করা হয় ৭০০ বস্তা ভারতীয় চিনি।, কসমেটিক্স, ফুচকা। আটকের পর ডিবির জাফলং পয়েন্টের লাইনম্যান শ্যাম কালার মধ্যস্ততায় তাৎক্ষণিক ১২০ বস্তা চিনি বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। পরে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে লাইনম্যান শ্যামকালা নিজে ডিবি অফিসে এসে কসমেটিক্স (কীট) ও ফুচকা সহ ৫৩৩ বস্তা চিনি ছাড়িয়ে নেয়। পরে ৭০০ বস্তার পরিবর্তে মাত্র ৭০ বস্তা চিনি জব্ধ দেখিয়ে একটি মামলা রুজু হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করে। এ সময় ডিবির ওসি ইকবালের সাথে নাকি শ্যামকালার বড় অংকের আর্থিক লেনদেন হয়।
সীমান্তবর্তী সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সিন্ডিকেট রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এ সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছেন, থানার একাধিক এসআই, রাজনৈতীক ক্যাডার, জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় লোকজন জানান, শুধু উপজেলার ১১নং মধ্যজাফলং ইউনিয়নের সিড়ির ঘাট, হাজীপুর, লামাপুঞ্জি, প্রতাপপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনের রাস্তা, লামাপুঞ্জি, নকশিয়া পুঞ্জি, জিরো পয়েন্ট, কাটারিরাস্তা ও জাফলং চা বাগান হয়ে মধ্যজাফলং ইউনিয়ন ও পার্শবর্তী ইউনিয়নের প্রায় ২২টি চোরাই পথ রয়েছে। এ সকল পথে প্রতিদিন আসছে ভারতীয় মাদকদ্রব্য, চিনি, চা পাতা, পান, সুপারি, আলু, টমেটো, পিঁয়াজ, জিরা, গুঁড়া মসলা, কসমেটিকস, কিট, স্মার্ট মোবাইল ফোন, গাজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, ও অস্ত্র। সাথে রয়েছে বিভিন্ন ব্রান্ডের শাড়ি থ্রিপিস লেহেঙ্গা ইত্যাদি। চোরাই পথে আসা এ সকল পণ্যের সরকারি কোন বৈধতা না থাকলেও স্থানীয় থানা পুলিশ নিজেদের সোর্স ও স্থানীয় সরকার দলীয় কতিপয় ব্যক্তিরা নিজেদের জনবল নিয়োগ দিয়ে চোরাইপথে আসা ভারতীয় পণ্যের উপর দৈনিক লক্ষ-লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করছেন বলে দীর্ঘ দিন থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
যদিও মাঝেমধ্যে থানা পুলিশ লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আইওয়াশ দেখিয়ে সন্তুষ্ট করে থাকে। কিন্তু রাত হলে সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে আসা এসব পণ্য নিয়ে তামাবিল রোড দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে ডিআই ট্রাক দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনাসেই চলে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তামাবিল ও জাফলং এলাকার চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করে জাফলংয়ের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এরা নিজেদেরকে আগে মন্ত্রীর লোক পরিচয় দিলেও এখন এমপির নিজস্ব লোক পরিচয় দিয়ে থাকে। ওই সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে থানা থেকে চোরাচালানের লাইন কিনে নেয়। প্রতিমাসে ২০-২৫ লাখ টাকায় এই সীমান্ত লাইন বিক্রি করা হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। আর লাইনম্যানের মাধ্যমে চোরাচালানের সব মালামাল ভারতে যায় এবং বাংলাদেশে আসে। জাফলংয়ের সচেতন মহলের দাবি এই চোরাকারবারি গডফাদারদের চাঁদাবাজির খুঁটির জোর কোথায়? আর শ্যাম কালার সাথে ডিবির ওসি ইকবালে এতো পিরিতি কিসের।
৫৭০ পড়েছেন