• ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

নগরীর রাস্তা-ফুটপাতে চাঁদাবাজদের লাইসেন্স দিলো কে?

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৭, ২০২৩
নগরীর রাস্তা-ফুটপাতে চাঁদাবাজদের লাইসেন্স দিলো কে?

নগরীর রাস্তা-ফুটপাতে চাঁদাবাজদের লাইসেন্স দিলো কে?

Sharing is caring!

আব্দুল হালিম সাগর সিলেট বিশেষ প্রতিবেদন (৩) : সিলেট মহানগরের ভিআইপি রাস্তা ও ফুটপাতে এরা ১২ থেকে ১৪ জন চাঁদাবাজের চক্র। দিনে-রাতে প্রকাশ্যে মেয়র আরিফ ও পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ, বন্দরবাজার পুলিশ ফাড়ির লাইনের নামে চাঁদা উত্তোলন করে তারা। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করার বা কিছুই বলার সাহস নেই পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের।

প্রশ্ন হচ্ছে, সিলেট নগরীর ব্যস্থতম রাডে ও ফুটাপাত দখল করে কি করে বা কার ক্ষমতার বলে ? আর যারা দখলবাজদের কাছ থেকে চাঁদা তোলেন তারাই বা রাস্তা-ফুটপাতে চাঁদাবাজীর লাইসেন্স পেলো কোথায়? চাঁদাবাজদের পরিচয় তো চাঁদাবাজ, ওরা মেয়রের লোক হউক আর পুলিশ কমিশনারের লোক হউক। বা বন্দর ফাঁড়ির লোক হউক। পুলিশের ভাষ্যমতে এদের বেশ কয়েকজন চাঁদাবাজ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী খুব কাছের লোক ও সারাসরি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির হকার্স দল, শ্রমিক দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। বাকিরা নাকি বিভিন্ন রাজনৈতীক লেবাসদারী। পুলিশ প্রকৃত চাঁদাবাজদের গ্রেফতার না করে প্রতিদিন ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ধরে কোর্টে চালান দিচ্ছে কেন? যাহা সম্পন্ন অমানবিক। প্রকাশ্য পুলিশের সামনেই ডিইউটি পার্টির নামে রাস্তা ও ফুটপাতে টাকা উত্তোলন হলেই পুলিশ কোন কথা বলছেনা, কেন নিরব থাকছে। যা দেখে নগরবাসী বলছে, সাগরের অথৈই জলে সাঁতার কাটছে পুলিশ। শুধু পুলিশ নয় কতিত কয়েকজন সাংবাদিকদের নামেও এসব চাঁদাবাজদের কাছ থেকে টাকা তুলেন জনৈক শামিম। এমন দাবী চাঁদাবাজ কয়েকজনের। তবে তার আসল পরিচয় এখনোও পাওয়া যায়নি, এমন দাবী রাস্তা ও ফুটপাতের চাঁদাবাজদের। পুলিশ একদিকে হকার তাড়াচ্ছে আর অপর দিকে হকারই রাস্তা-ফুটপাত আবার দখল করছে। চোর পুলিশ খেলাটা বেশ মজাদার বটে।

শুধু এসএমপির উত্তর সুরমায় রয়েছে প্রায় ১২ শত ক্ষুদ্র হকার। যারা নিত্যদিনের পেঠের দায়ে ব্যবসা করে। আর ব্যবসা করতে গেলেই সে সকল চাঁদাবাজদের বিভিন্ন হারে টাকা দিতে হয়। হকারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তা ও ফুটপাতে চাঁদাবাজদের শীর্ষে আছেন জাতীয়তাবাদী হর্কাস দলের সভাপতি নুরুল ইসলাম, মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল আহাদ। এই দুই রত্নের হাতেই নগরীর ১২শ হকারসহ বন্দবাজার ফাঁড়ি, কোতয়ালী পুলিশ জিম্মি। তাদের হুমকি মেয়েরের কাছ থেকে রাস্তা ও ফুটপাত লিজ নিয়েছি। বিনিময় দিয়ে, এখানে পুলিশ বা সাংবাদিকের কি করার আছে। পুলিশের ডিউটি পার্টিকে তো আমরা টাকা দেই। ট্রাফিকের সার্জেণ্টকেও টাকা দেই। নেতাদের ম্যানেজ করে আমরা খাই। লিখে কোন লাভ হবেনা।
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে, বন্দর ফাঁড়ির আইসিকে ফোন দিলেও ফোন রিসিভ না করায় তার নতুন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে পুলিশের কথায় নয় এখন ফুটাপাত-রাস্তা চলে হকার নেতা নুরুল-আহাদ,সুমন,সাজুর কথায়। সিসিক মেয়রের সাথে নাকি তাদের চুক্তি রয়েছে, মেয়রের যে কোন অনুষ্টান হলে, মিছিল সহকারে হকারদের নিয়ে আসতে হবে, তা ব্যক্তিগত হউক আর সরকার বিরোধী হউক। বিনিময়ে ফুটপাতে যা খুশি তারা করতে পারবে তারা। নুরুল-আহাদের সাথে আছেন মুমিন ‘লেংড়া’ কামাল, সাব্বির, দাঁড়িওয়ালা একরাম, গেদু, উজ্জ্বল, ফারুক, রাসেল, মিজান, শামিম, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ‘সাজু’। শাহাজান উরফে প্যান্ট শাহাজান, শাহাজান সাজু। ইউসুফ উরফে (ইয়াবা ব্যবসায়ী ইউসুফ), সুমন, লোকমান সহ আরো কয়েকজন। এদের সকলের সাথে রয়েছে পুলিশের উঠা বসার গভির সম্পর্ক। ফলে হকার আটক করলেও চাঁদাবাজদের আটক করেনা পুলিশ।

অভিযোগের তীর বন্দর ফাঁড়ির দিকে হলে তারা দায়সারা হকার দৌড়ানো দিয়ে ক্লান্ত, বা হর্কার আটক করেই দায় শেষ। চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করার কোন সাহস নেই বন্দর ফাঁড়ি পুলিশের। এইসব চাঁদাবাজদের কারণেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রায় অর্ধকোটি টাকার বাজার হয়েছে খেলার মাঠ। ডামাডোল পিটিয়ে রাস্তা-ফুটপাত হকারমুক্ত মিশন আরিফের পরিসমাপ্তি। ফুটপাতের চাঁদার টাকায় মেয়রের বাসায় প্রায়ই নাকি দেশী মাছ, মাংসের বাজার-সদাই পাঠাতে হয়। এমন বক্তব্য ফুটপাতের শীর্ষ চাঁদাবাজ নুরুল ও আহাদগংদের। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের জনৈক কর্মকর্তাও নাকি চাঁদা ভাগ বসান। যার ফলে সিটি মেয়র ও এসএমপি কমিশনারের হকারমুক্ত নগরী গড়ার সকল পরিকল্প ব্যর্থ।

মেয়র বদর উদ্দিন কামরান ক্ষমতায় থাকা কালে ফুটপাতের একক রাজা ছিলো রিকব। রকিবের একক নিয়ন্ত্রনেই সিলেট নগরীর সকল ফুটপাত চলতো। সময়ের ব্যবধানের সেই রকিবের নামে আংশিক চাঁদা এখনো উত্তোলন হয়। কিন্তু এখন ফুটপাতের নিয়ন্ত্রণ মেয়রের লোক পরিচয় দানকারী জাতীয়তাবাদী হকার্সদলের নুরুল ইসলাম শ্রমিক দলের আব্দুল আহাদের কাছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে দিনে রাতে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে চাঁদা তোলে ১৫/১৬ জনের কয়েকটি চক্র। ব্যক্তি স্বার্থে তাদের রাজনৈতীক পরিচয় ভিন্ন হলেও রাস্তা-ফুটপাতে চাঁদাবাজীতে তারা ঐক্যজোট।

২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর ফুটপাতের ১৬ চাঁদাবাজকে চিহ্নিত করে ছবিসহ আদালতে তালিকা দিয়েছিলেন মেয়র আরিফুল হক। আটক করা হয় হকার পরিষদের সভাপতি রকিবকে। ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি ৫০ লক্ষ টাকা খরছ করে পুরাতন হকার্স মার্কেটের ভেতরে একটি অস্থায়ী বাজার স্থাপন করলেন মেয়র। কিন্তু এখন কি সেই আগের মতো চাঁদাবাজদের তালিকা করতে পারেন না সিসিক মেয়র। কোথায় হারিয়ে গেলো দখলকৃত ফুটপাতের ঝুলিনো ‘হর্কার বসা নিষেধ সম্বলিত সাইনবোর্ড’। যেসব সাইনবোর্ডের অস্থিস্তই এখন নেই। সেই অস্থায়ী বাজারও এখন খেলা মাঠ। আদালতের আদেশ নিষেধও কি রাস্তা ও ফুটপাতের চাঁদাবাজদের কাছে অসহায়।

অনুসন্ধান মতে রাস্তা-ফুটপাত থেকে গড়ে প্রতিমাসে আদায়কৃত চাঁদার পরিমান এক কোটি টাকা। এই টাকা যায় কোথায়? পড়ুন আগামী কাল……………….।

৬১৪ পড়েছেন