• ২৫শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

এরা সাবেক মন্ত্রী ইমরানের নিজস্ব চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য

admin
প্রকাশিত আগস্ট ২৭, ২০২৪
এরা সাবেক মন্ত্রী ইমরানের নিজস্ব চাঁদাবাজ চক্রের সদস্য

Sharing is caring!

স্টাফ রির্পোটার: সিলেট-৪ আসনের সাবেক সংসদ্য ও সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদের মদদ আর শেল্টারে ঐতিহ্যবাহী জাফলংয়ের দৃষ্টিনন্দন ৯৫ ভাগ এলাকা ধ্বংসকারী লুটতোরা সশস্ত্র ক্যাডার মন্ত্রীর লোকগুলো এখন কোথায়? দুজন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বাকিরা আছেন আত্মগোপনে। এসব লুটরাজদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুদকে একটি মামলা চলমান থাকলেও টাকার বিনিময়ে সেই মামলা থেকে অনেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টার করছেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর সাবেক মন্ত্রী ইমরানের প্রকাশ্য মদদে জাফলং (ইসিও) এলাকার বালু-পাথর হয়েছে লুটপাট। মন্ত্রীর লোক পরিচয়ে নিজস্ব লোক পরিচয়ে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী বসিয়ে জাফলংয়ে জামাই সুমন উরফে ইমরান হোসেন সুমন, গোয়াইনঘাট কলেজের সদ্য পদত্যাগকৃত অধ্যক্ষ ফজলুল, আওয়ামীলীগ নেতা সামছুল ইসলাম উরফে কালা সামছু, সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিউল আলম নাদেলের প্রতিনিধি ছাতকের আলা উদ্দিন, ফিরোজ মিয়া, ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ছমেদ (সবেদ) মিয়া, জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির বড়ভাই ও সাবে প্রতিমন্ত্রী শফিুকর রহমান চৌধুরীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী বিশ্বানাথী ফয়জুল মিয়া, সাবু মিয়া ও তার ছেলে ফারুক মিয়া, কালা রকমত আলী, নয়াবস্তির ইনছান আলীর ছেলে আলীম উদ্দিনসহ তাদের বাহিনীর নেতৃত্বে দিনে-রাতে পরিবেশ বিনষ্টকারী বোমামেশিন ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে খাবলে খেয়েছে জাফলং এলাকা। তবে সম্প্রতি এদের একটি তালিকা হচ্ছে বলে প্রশাসনিক একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিগত সরকারে আমলে উচ্চ আদালতের নির্দেশ, ডিসি অফিসের নোটিশ, পরিবেশের নোটিশ, কোন কিছুই এদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বিশেষ করে পূর্ব জাফলংকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া হিসেবে গেজেটভুক্ত (ইসিও) এলাকায় তাদের তান্ডলিলা ছিলো নজর কাড়ার মতো। কোন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এই চাঁদাবাজ চক্রটি সেই সাংবাদিককে আটক করে তাদের ক্যামেরাসহ সব কিছু ছিনিয়ে নিতো। পরে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে ঐ সাংবাদিককে ক্ষমা চাইয়ে ভিডিও রেকর্ড করে ছেড়ে দিতো। হুমকি দিতো পুলিশ দিয়ে চাঁদাবাজী মামলার, তাদের ফোনের মুহুর্তে চলে আসতো থানা কিংবা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বিট অফিসরা। বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অভিযান চালিয়ে এসব লুটকারী চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোটিশ প্রেরণ করা হলেও কোনদিন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি স্থানী প্রশাসন। কারণ সাথে সাবেক মন্ত্রী নিজেই ফোন দিয়ে প্রশাসেন কর্মকর্তাদের ধমক দিতেন। যখন তখন করতেন আইনের অপব্যবহার। এরা জাফলংয়ে লুটপাটের পাশাপাশি উপজেলার প্রশাসনের রয়েলিটির নামে প্রতিদিন কোটি টাকা চাঁদা আদায় করতো।
সূত্রমতে, অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে গত ১৫ বছরে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ শ্রমিকের। তবে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় এই চক্রের কাউকে কোন মামলায় আসামী করতে শুনা যায়নি। এদের কারো নাম থাকলে থানায় পুলিশ মামলা নিতে অপারগতা দেখাতো। স্থানীয় প্রশাসন, ডিসি অফিস, এসপি অফিস এবং জেলার রাজনৈতিক নেতারা সরাসরি এই চাঁদাবাজীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বিগত কয়েক বছর থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর নিরিহ শ্রমিকের কাঁধে ভর করে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করতে চক্রের সদস্যরা। নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে দিতেন অস্ত্রের মহড়া, এলাকায় ছড়াতেন আতংক। যাতে তাদের এসব কর্মের বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ না করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মতে উচ্চ আদালত ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর সিলেটের জাফলং ডাউকি নদীকে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করেন। পরিবেশ মন্ত্রনালয় থেকে গেজেটও প্রকাশিত হয়। কিন্তু কোনদিনই তার বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি জাফলং ডাউকি নদী ও নদীর উভয় পাড় থেকে ৫শ’ মিটার প্রস্থের এলাকা এবং জাফলং ডাউকি ও পিয়াইন নদীর মধ্যবর্তী খাশিয়া পুঞ্জীসহ ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গমিটার এলাকাকে ইসিএ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কে করবে আইন প্রয়োগ। সকলেই এসব চাঁদাবাজ আর মন্ত্রীর কাছে ছিলেন জিম্মি। রাত হলে জামাই সুমন সরকারি সব কয়টি দপ্তরে টাকার হিস্যা নিয়ে হাজির হতো। বুঝিয়ে দিতো প্রতিদিনের কমিশন। সামান্য একটি বিস্কুট কোম্পানীর সেলম্যান জামাই সুমন তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলেও গড়েছে বিশাল সম্পদের পাহাড়। ব্যাংকে রয়েছে শতকোটি টাকা। প্রশানকে ম্যানেজ করতে ঐ চক্রের সদস্যদের জমানো আছে প্রায় ১৭ কোটি টাকার একটি ফান্ড।
সুমনের সহযোগী নয়াবস্তি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইনসান আলীর ছেলে এক সময়ের পাথর শ্রমিক আলীম উদ্দিনের রয়েছে সম্পদের পাহাড়। কান্দুবস্তির মস্তফার ছেলে ফিরোজ ও বিশ্বনাথের বাসিন্ধা বিশ্বনাথী ফয়জুল ইসলামের রয়েছে নামে বেনামে সম্পদ। তাদের সহযোগী গোয়াইনঘাটের মাসুক আহমেদ ও মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত আসরব আলীর পুত্র জামাই সুমনের মেয়ের জামাই পরিচয়দাতা সোহেলে রয়েছে অবৈধ অনেক সম্পদ। এ দুজন জাফলংয়ে চাঁদার টাকা কানেকশন করতেন।এরা এতো ক্ষমতাধর ছিলো, স্থানীয় এক উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের কাজে বাধা হওয়ায় প্রকাশ্যে একটি সভায় সাবেক সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার পাল-কে পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে ছিলো। জাফলংয়ের অপরাধ জগৎ এমনকি গভীর রাতে নদীতে বোমামেশিন চালানোর সময় সাংবাদিকদের নজরদারি এড়াতে এক থেকে দেড়শ’ উঠতি বয়সী যুবককে সশস্ত্র পাহারায় রাখা হতো। তাদের হাতে থাকে লম্বা দেশী বিদেশী ধারালো অস্ত্র।
সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে-সাথে এই চক্রের দুজন সদস্য দেশ ছাড়েন। কলেজের সেই ক্ষমতাধর অধ্যক্ষ কলেজ থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য হন। আর লুটরাজরা অনেকে চলে যায় আত্মগোপনে। গতকাল জাফলং এলাকায় গিয়ে জানা যায়, চাঁদাবাজ চক্রের মুলহোতা মামার দোকান মেলার মাঠের বর্তমান বাসিন্দা ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সাবেক সদস্য ইমরান হোসেন সুমন ওরফে (জামাই সুমন) এখন আত্মগোপনে। তার বসতবাড়িতে হামলা ও তার মালিকানাধিন একটি ফ্যক্টরীতে আগুন দিয়েছেন তার হাতে ১৫ বছরের নির্যাতিতরা। আলীম উদ্দিন ও ট্রাক শ্রমিক সভাপতি সমেদ (সবেদ) তিন চারদিন আগের রাতের আধারে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করেন। এই চাঁদাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সিলেট দুদক অফিসে একটি মামলা চলমান।
চলছে তদন্ত কিন্তু মামলাটি নিয়ে রয়েছে স্থানীয়দের সন্দেহ। কারণ এই চক্রটি টাকা দিয়ে দুদকের মামলা থেকে পার পেয়ে যেতে পারে। এরা নতুন রুপে আবার জাফলয়ে আসবে, তাই কেউই তাদের নামে অভিযোগ করতে চান না।
১৫৬ পড়েছেন