Sharing is caring!
আব্দুল হালিম সাগর : সিলেটের কানাইঘাটে ব্যবসায়ী ও জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিন (৪২) হত্যার ঘটনায় ৬দিন হলেও এখনো অভিযুক্ত কোন খুনিদের গ্রেফতার করতে পারেনি কানাইঘাট থানা পুলিশ। খুনিদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী হেপী বেগম। কিন্তু আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের থেমন আগ্রহ নেই বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। খুনের ৬ দিনেও আসামীদের গ্রেপ্তার না হওয়ায় স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঘটনার ৬ দিন অতিবাহিত হলেও খুনিরা এখনো অধরা। পুলিশ বারবার আশ্বাস দিলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন,তবে কি পুলিশ ইচ্ছে করেই খুনিদের গ্রেফতার করছেনা। নাকি সোর্স নামের অমানুষগুলোর মাধ্যমে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যানেজ হয়ে খুনিদের গ্রেফতারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন? উন্নত প্রযুক্তি সময়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ হাফিজ সিহাবের খুনিদের গ্রেফতার করতে না পারা কানাইঘাট থানার ওসির দায়িত্বপালনের ব্যার্থতার নজির সৃষ্টি করে চলছে। ওসি আব্দুল আউয়াল কানাইঘাট থানায় যোগদানের নয় মাসে থানা এলাকায় নয়টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি খুনের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ছিলো প্রশ্নবৃদ্ধ। তবে হাফিজ শিহাবের খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার স্থানীয় জনতা। খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে একের পর এক সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ জামায়াতসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। কারণ নিরীহ শিহাব ছিলেন এক প্রতিবাদি যুবক।
যে কারণে খুনিদের টার্গেট ছিলেন হাফিজ শিহাব উদ্দিন: খুনিরা এলাকার বখাটে হিসাবে চিহ্নিত ছিলেন। এলাকার সাধারণ মানুষের উপর জুলুম-নির্যাতন ছিলো নিত্যদিনের ঘটনা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিগত দিনের এলাকার কোন উন্নয়ন কাজ করতে পারতোনা শিহাবের খুনিদের পার্সেন্টিজ না দিয়ে। গত বছর সুরমা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন শিহাব। সে সময় খুনিরা খালোপার নদী থেকে বালু উত্তোলনের কন্ট্রাক্ট নিয়ে ছিলেন। কিন্তু শিহাবের প্রতিবাদের কারণে ব্যর্থ হন। অপর দিকে কানাইঘাট সীমান্তের চোরাচালানের নিরাপথ রোড সিলেট-কানাইঘাট বোরহান উদ্দিন রোড। প্রতিটি গাড়ি থেকে এই বখাটেরা নাকি চাঁদাবাজি করতো পুলিশের নামে। এসব বন্ধ করতে শিহাব উদ্দিন এলাকাবাসীকে সচেতন করছিলেন। ঘটনার দিন নিহত শিহাবের সাথে খুনিদের তর্ক বিতর্ক হয় স্থানীয় বাজারে। সে সময় শিহাবকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় খুনিরা। এর আগে খুনিদের অপরাধমুলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে হাফিজ শিহাব নাকি থানায় অভিযোগও করে ছিলেন। এরপর থেকে খুনিদের টার্গেটে পরিনত হন হাফিজ শিহাব উদ্দিন। গত ২৭ মে মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয় জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিনকে। বুধবার রাতে তার দাফন সম্পন্ন হয় নিজ গ্রামে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় রাজাগঞ্জ বাজারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। পরদিন শুক্রবার স্থানীয় এলাকাবাসী রাজাগঞ্জ বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। শনিবার খালোপার বাজারে প্রতিবাদ সভা করে স্থানীয় এলাকাবাসী। রবিবার বিকালে উপজেলার বোরহান উদ্দিন বাজারে প্রতিবাদ সভা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এলাকার সর্বস্থরের জনসাধারণ। সোমবার কানাইঘাট উপজেলার ৭ ও৮ নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামী প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষুভ মিছিল করে। এসব মানববন্ধন থেকে আসামীদের গ্রেফতারের জন্য বারবার প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করা হলেও পুলিশ যেনো কোন কিছুই আমলে নিচ্ছেনা।
সূত্র মতে ওসি যোগদানের পর কানাইঘাটে ৯টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক খুন সাধরণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরী করছে। একটি ঘটনা ঘটার পর প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের উদাসীনতা ও খুনের সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে বিচারহীনতা বাড়ছে স্থানীয় এক সাংবাদিক মন্তব্য করেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিন খুন হয়েছেন রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক দ্দন্দ্বে কারণে। খুনিরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতির সাথে জড়িত। পুলিশ বলছে মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে না পারলেও আমরা এখন পর্যন্ত তিনজন সন্দেহ ভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা এখন কারাগারে আছেন। যেখানে নিহত শিহাবে স্ত্রী খুনিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন, সেখানে সন্দেহভাজন গ্রেফতার নিয়েও আছে রহস্য।প্রকৃত খুনিদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছেনা এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই থানা পুলিশের কাছে।
নিহত হাফিজ শিহাব উদ্দিন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের খালোপার পশ্চিম মহল্লা গ্রামের মৃত মজু মিয়ার ছেলে। গত মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় খালোপার সমিল সংলগ্ন স্থানে গাড়ি থেকে ইট আনলোড করার সময় ৪/৫ জন যুবকের উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে তিন সন্তানের জনক হাফিজ শিহাব খুন হন। শিহাবের বড় ভাই মাসুক উদ্দিন জানান, আমার ভাই বালু পাথরের ব্যবসা করত। ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে তাকে খুন করা হয়েছে। এলাকার যে কোন অপরাধে সাথে আসামীরা জড়িত থাকতো। এর তাদের এসব অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতো হাফিজ শিহাব উদ্দিন। তিনি জামায়াতে ইসলামীর শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নেতা ছিলেন। জানিনা আমার ভাইয়ের খুনিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে কিনা? খুনিদের মধ্যে খালোপার গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বগলাইয়ের চার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জামাল আহমদ, কামাল আহমদ ও যুবলীগ নেতা শিব্বির আহমদ এবং মৃত আনফর আলীর ছেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জন।
সিলেট মহানগর সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী ও জেলা সেক্রেটারী জয়নাল আবেদীন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতনের পরও সিলেটের কানাইঘাটে আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক জামায়াত নেতা খুনের ঘটনায় আমরা বিস্মিত ও বিক্ষুব্ধ। খুনী শিব্বির গংরা চাঁদাবাজি চুরি ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িত। তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তরুণ জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিনকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, হাফিজ শিহাব খুনের ঘটনার পরপর আমরা ওসি আব্দুল আউয়ালের সাথে ঘটনাস্থলে যাই। বারবার ওসিকে বলি খুনিরা এখনো এলাকায় লুকিয়ে আছে আমাদের কাছে তথ্য আসতেছে। একটু গ্রামের হাওরের দিকে এক খুনিদের বাড়ি। হয়তো সেদিকে গেলে খুনিদের আটক করা যাবে। কিন্তু ওসি নিহত শিহাবের বাড়ি থেকে আর নড়েননি। ঘটনার পর পর পুলিশ অভিযান চালালে হয়তো দুই একজন খুনিকে পুলিশ আটক করতে পারতো। এ ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য নিতে গেলে ওসি শুধু বলেন, অভিযান অব্যাহত চলছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত অভিযানের কোন সফলা আসেনি।
১২৪ পড়েছেন