• ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৫ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সিলেটের গোয়াইনঘাটে চাঁদাবাজী মামলার আসামীরা আরো ব্যাপরোয়া

admin
প্রকাশিত জুলাই ৯, ২০২৫
সিলেটের গোয়াইনঘাটে চাঁদাবাজী মামলার আসামীরা আরো ব্যাপরোয়া

Sharing is caring!

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি: সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার একটি চাঁদাবাজী মামলা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন নদী থেকে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি চাঁদাবাজ চক্র ব্যাপরোয়া হয়ে উঠে। অনেকে বালু মহাল ইজারা নিয়ে চাঁদাবাজদের বাধাঁর সম্মুখিন হয়েছেন। আবার অনেকে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন-ব্যবসা করে যাচ্ছেন। গত রবিবার (৬জুলাই) সকাল ১১টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন, গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ও নৌপুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে উপজেলার ৪নং লেংগুড়া ইউনিয়নের লেংগুড়া গ্রামের ঘাটে নদী এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে আটককৃতরা হলেন, মাটিকাপা গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে ইকবাল হোসেন ইমন(২১), জিহাদ উল্লাহ’র ছেলে কুদরত উল্ল্যা (৪৩), মাহমুদ আলীর ছেলে তোফায়েল আহমেদ (২৬), জমির উদ্দিন’র ছেলে বদর উদ্দিন (৪৫), মৃত আব্দুস ছালাম’র ছেলে রহিম উদ্দিন ( ৪৫), তাহির আলীর ছেলে সুলেমান (৩০)। জানা যায়, সরকারের ইজারাকৃত বালু মহাল থেকে বালুবাহী বাল্কহেড যাওয়ার পথে লেংগুড়া গ্রামের ফয়সল আহমদের ছেলে আজমল হোসেনর নেতৃত্বে সক্রিয় একটি চাঁদাবাজ চক্র অবৈধভাবে বাল্কহেড গুলো আটক করে রাখে। এ বিষয়ে ইজারাদারের সাথে দফায় দফায় সমন্বয়ক পরিচয়দানকারি আজমল গংদের সাথে একাধিক বার বিষয়টি নিরসনের জন্য বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এদিকে বালু বোঝাই প্রায় দুই শতাদিক বাল্কহেড দীর্ঘ ১৫ দিন থেকে লেংগুড়া গ্রামের আজমল বাহিনীর হাতে জিম্মি থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রশাসনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আনুমানিক এক হাজার নৌকা শ্রমিককে জোরপূর্বক জিম্মি রাখায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত অভিযানে আজমল গংদের হাত থেকে তাদের উদ্ধার করে যৌথ বাহিনীর অভিযানিক দল। অভিযানকানে আজমল হোসেন পালিয়ে গেলেও তার কিছুসংখ্যক লোক সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক তাদের ৬জনকে আটক করতে সক্ষম হয় অভিযানকারীদল। এ সময় ৬জন চাঁদাবাজকে আটক করলে আজমলকে আটক করতে পারেনি অভিযানকারী দল। পরে রাতে দেখা যায় অভিযানকারী দলসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসি, সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে আজমল আলী নামের এক যুবক অশ্লিল ভাবে গালি গালাজ করতে। সুস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে লাইভটি ভাইরাল হয়ে যায় দ্রæত। এদিকে ০৭/০৭/২০২৫ ইং তারিখে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ঐ দিন রাতে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন আব্দুল হালিম নামের একজন। গোয়াইনঘাট থানার মামলা নং ১৩/১৮৫। সেই মামলায় আজমল আলীসহ তার সহযোগীদের আসামী করা হয়। উক্ত মামলায় আসামি করা হয়ে বর্তমান জাপান প্রবাসী হিফজুর রহমান রিজভীকে। তবে অনেকে বলেন হিফজুর রহমান ২২/৬/২০২৫ ইং তারিখে জাপান চলে গেলেও তিনি দীর্ঘ দুই মাস দেশে অবস্থানকালে আজমল আলীর সহযোগী হয়ে লেঙ্গুড়া এলাকায় চাঁদাবাজীতে মাঠে ছিলেন। তিনি আজমল আলীগংদের গডফাদার ও ফাউন্ডার, তিনি বর্তমানে জাপান বসেই আজমল আলী নিজেকে সব রকম সলাপরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আজমল আলী নিজেকে বৈষম্যবিরোধী নেতা দাবী করলেও বেশ কয়েক মাস থেকে তার বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজীর অভিযোগ ছিলো। যা বিভিন্ন সময়ে সুস্যাল মিডিয়া সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন আজমল আলীসহ তার লেঙ্গুড়ার বাহিনীর কাছে এক রকম জিম্মী হয়ে পড়ে। বিগত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে লেঙ্গুড়া বাহিনী জাফলংসহ গোয়াইনঘাট এলাকার বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ করতো। সেই বাহিনীর সদস্য ছিলো বর্তমান জাপান প্রবাসী রিজভী। স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করেন বৈধ বালু ইজারাদারগণও তাদের বালু নিয়ে যেতে গোয়াইনঘাট বাজার এলাকায় আসলেই আজমল আলীগংদের বাঁধার সম্মুখিন হয়েছেন। দীর্ঘ ২ মাস থেকে এমন খেলা গোয়াইনঘাট এলাকায় চলমান ঘটনা। এদিকে রিজভী জাপান যাবার আগ পর্যন্ত আজমল আলীর সাথেই ছিলো বালু চাঁদাবাজীতে জড়িত। যা প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই স্বীকার করেন। তবে গত ৭ জুলাই করা মামলার আগে তিনি জাপান চলে যাওয়ায় অনেকে তার প্রতি দরদ দেখিয়ে বলছেন তিনি জাপানে থেকে আসামী হলেন কি করে? যদি উক্ত মামলার অপরাধ সংগঠনের তারিখ দেখানো হয়েছে ২৮/০৬/২৫ তারিখ থেকে বিভিন্ন সময়ে। তাই উক্ত মামলার ২নং আসামী করা হয়েছে জাপান প্রবাসী হিফজুর রহমান রিজভীকে। যদি ২৮ তারিখের ঘটনার আগেই রিজভী জাপানে চলে যান। বর্তমান জাপান প্রবাসী হিফজুর গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুরা গ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের পুত্র। স্থানীয়রা বলেন রিজভী যেদিন থেকে জাপান গেছেন এর আগের কয়েকটি ঘটনা বা সুস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ভিডিও পর্যবেক্ষণ করলে আজমল আলীর সাথে তার সম্পৃক্ততার সত্যতা পাওয়া যাবে। তবে পুলিশ বলছে, মামলায় প্রবাসীকে যদি আসামি করা হয় পুলিশ তদন্ত করবে, তদন্তে নির্দোষ প্রমানিত হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, কেউ প্রবাসে থেকে মামলার আসামি হলে তদন্ত করে মামলা থেকে বাদ দেয়া হবে । তবে ‘নৌপথে বালু বোঝাই বাল্কহেড আটকে রাখার দ্বায়ে এবং ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ৬জনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি আটককৃতদের কাজে ব্যবহৃত ২টি কাঠের নৌকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি নৌ-পথে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত অপরাপরদের আটকের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।’
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার রতন কুমার অধিকারী বলেন, নদী পথে বালুবাহী বাল্কহেড অবৈধভাবে আটকের খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ. নৌ পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

১২ পড়েছেন