Sharing is caring!
সিলেটের পাথর লুটকাণ্ডে একের পর এক বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল। এই লুটপাটে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি জড়িত রয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের প্রায় সব স্তরের কর্মকর্তারা। সিলেট বিভাগীয় কমিশনার থেকে শুরু করে, সিলেট জেলা প্রশাসক (ডিসি), কোম্পানীগঞ্জে সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিলেট পুলিশ সুপার (এসপি), কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং কোম্পানীগঞ্জে দায়িত্বপ্রাপ্ত চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরাসরি মদদ ছিল পাথর লুটপাটে। পাথর চুরির ঘটনায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কোম্পানীগঞ্জের বিদায়ী চার নির্বাহী কর্মকর্তা যথাক্রমে আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, উর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা, সিলেটের পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিজিবি’র কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টিও উঠে আসে দুদকের প্রতিবেদনে। এ ছাড়া টাকার ভাগ পেয়েছেন জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট পুলিশ ইন্টার্নাল ওভারসাইটের (পিআইও) দুজন কর্মকর্তা। পুলিশকে ট্রাকপ্রতি ১০ হাজার টাকা দেওয়া হতো তিনটি শর্তে। স্থানীয় বিজিবির সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে। সব মিলিয়ে ৪ কোটি ঘনফুট পাথর লুটপাটে প্রায় ৮০ কোটি টাকা কমিশন ঢুকেছে স্থানীয় প্রশাসনের পকেটেই। পাথর লুটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও জড়িত অনেক ব্যবসায়ী। দুদক সূত্র বলছে, সিলেট থেকে অন্তত ৪ কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে। প্রতি ট্রাকে ৫০০ ঘনফুট করে হলে ৪ কোটি ঘনফুট পাথর লুটতে প্রয়োজন হয়েছে অন্তত ৮০ হাজার ট্রাক। দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, প্রতি ট্রাকে ১০ হাজার টাকা করে কমিশন পেলে ডিসি-এসপিসহ স্থানীয় প্রশাসনের পকেটে ঢুকেছে অন্তত ৮০ কোটি টাকা। তদন্তে সিলেটের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেছে। তার বিরুদ্ধে সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ পেয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এ ছাড়া তার অধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে না পারাও লুটপাটের অন্যতম কারণ। পাথর লুটপাটে সরাসরি চারজন ইউএনওর দায় মিলেছে অনুসন্ধানে। তাদের মধ্যে আছেন কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার, যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত। আরও আছেন গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা ইউএনও মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা ঊর্মি রায় এবং গত বছরের ১১ জুলাই থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা আবিদা সুলতানা। একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ইউএনও তাদের দায়িত্ব পালনকালে নামমাত্র ও লোক দেখানো কিছু ব্যবস্থা ছাড়া পাথর লুট বন্ধে তেমন কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। ওসির দায়দায়িত্বে বলা হয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে উজায়ের আল মাহমুদ আদনান-সহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে পাথর লুটপাটে সহায়তা করেছেন। থানা পুলিশের নির্দিষ্ট সোর্স কখনো নিজেরাই এ চাঁদার টাকা উত্তোলন করতেন। অর্থ উত্তোলন ও সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্ব পালন করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ছয়টি বিটের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া এ লুটপাটে কোম্পানীগঞ্জ থানা ও গোয়াইনঘাট থানার প্রায় সব পুলিশ কর্মকর্তা কমিশন পেয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনকে টাকা দেওয়া হতো তিনটি শর্তে। সেগুলো হলো—পাথরের ট্রাক না আটকানো, অভিযান না চালানো এবং অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে বাধা প্রদান না করা। সাদাপাথর লুটকাণ্ডে সিলেটের প্রশাসনে অস্থিরতা চলছে। অনেক কর্মকর্তাই এখন ‘বদলি’ ও ‘শাস্তি’ আতঙ্কে ভুগছেন। ইতোমধ্যে নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে। কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান ও অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। তালিকাসহ প্রতিবেদনটি দুদক প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পাথর চুরির সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে, যা কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।’ দুদকের প্রতিবেদনে কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের পাথর আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ও সুবিধাভোগী সংস্থা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তিবর্গ জড়িত উল্লেখ করা হয়। তবে, অনুসন্ধানে সাদাপাথরকাণ্ডে কয়েকজন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলেও সেই তালিকা সংযুক্ত করেনি দুদক। প্রাপ্ত তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, উল্লেখ করা হয় দুদকের প্রতিবেদনে। ‘স্থানীয় প্রশাসনের সাথে অসাধু যোগসাজশে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকার পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগের আলোকে ১৩ আগস্ট সাদাপাথর এলাকায় দুদকের সিলেট অফিস একটি অভিযান পরিচালনা করে। এ অভিযানের প্রেক্ষিতে ওইদিন রাতেই স্থানীয় প্রশাসন জরুরি সভা আয়োজন করে এবং যৌথবাহিনীর মাধ্যমে লুটকৃত পাথর উদ্ধার ও প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয়, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। উক্ত অভিযানকালে প্রাপ্ত তথ্যে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশ ছিল। নদী ও পর্যটন এলাকা থেকে পাথর চুরি করে প্রথমে স্থানীয় স্টোন ক্রাশার মেশিন কারখানায় জমা করা হয়। পরে তা ভাঙানো হয়, যাতে চুরি হওয়া পাথরের অস্তিত্ব পাওয়া না যায়। পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতি না থাকলেও গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে, বিশেষ করে গত ৩ মাস ধরে পাথর উত্তোলন চলতে থাকে। পর্যটন এলাকাটি সংরক্ষিত পরিবেশ এলাকা হওয়া সত্ত্বেও ১৫ দিন আগে থেকে নির্বিচারে পাথর উত্তোলন ও আত্মসাৎ হয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ পাথর তুলে এলাকায় অসংখ্য গর্ত ও বালুচরে পরিণত হয়েছে। প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনারকে দায়ী করে বলা হয়, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী ৮ জুলাই তার কার্যালয়ে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি বলেন, সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা জড়িত। তার এ বক্তব্যটি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হলে সাদা পাথর লুটপাটে ব্যাপক উৎসাহ জুগিয়েছে। সরকারিভাবে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ থাকলেও তার এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে পাথর লুটপাটকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন। সিলেটের সাবেক জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদকে দায়ী করে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেট জেলায় অবস্থিত সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃত। এ স্থান থেকে পাথর, বালি ও অন্যান্য খনিজসম্পদ উত্তোলন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। সরকারি বিধি অনুযায়ী বিদ্যমান পর্যটন স্পটগুলোর নান্দনিক সৌন্দর্য বজায় রাখাসহ পরিবেশ সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ বা কার্যক্রম গ্রহণ করা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব। পাথর লুটপাট ঠেকাতে সিলেটে কর্মরত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সদিচ্ছার অভাব, অবহেলা, ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট। তিনি তার অধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সাদাপাথর পর্যটন স্পট রক্ষায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। সাদাপাথর পর্যটন স্পটের বর্তমান অবস্থা একদিনে হয়নি। এটি বিগত ৭-৮ মাস ধরে চললেও জেলা প্রশাসক ও তার অধীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে চরম ব্যর্থ হয়েছেন। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও পরিবহণ বন্ধের জন্য পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিলেও সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আলোচ্য সাদা পাথর লুটপাটের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে বর্তমানে কর্মরত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চারজন ইউএনওকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাথরকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বিশেষ করে সাদাপাথর পর্যটন এলাকায় দৃশ্যমানভাবে দিনে দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের গোচরেই উক্ত পাথর লুটপাট হয়েছে। ওই সময়ে কোম্পানীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা কর্মরত ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা নামমাত্র ও লোক দেখানো কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া পাথর লুট বন্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনান সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনিসহ সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করে সাদা পাথর লুটপাটে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অবৈধভাবে উত্তোলিত পাথর প্রতি ট্রাকে প্রায় ৫০০ ঘনফুট করে লোড করা হয়। পরিবহণ ভাড়া ছাড়া প্রতি ট্রাকের পাথরের দাম ধরা হয় ৯১ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি ট্রাক থেকে দশ হাজার টাকা পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য আলাদা করা হয়। বাকি ৮১ হাজার টাকা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারীরা নিজেদের মাঝে বণ্টন করে নেয়। এছাড়া প্রতি ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পুলিশের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং উপজেলা প্রশাসনের জন্য ৫ হাজার টাকা বণ্টন হতো। এছাড়াও অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি বারকি নৌকা হতে এক হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। যার মধ্যে পুলিশ বিভাগ পায় ৫০০ টাকা এবং প্রশাসন (ডিসি ও ইউএনও) পায় ৫০০ টাকা। পুলিশ নির্দিষ্ট সোর্সের মাধ্যমে প্রত্যেক ট্রাক ও নৌকা থেকে এসব চাঁদা বা অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করে। প্রতিবেদনে খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর অবহেলার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, খনি ও খনিজসম্পদ বিধিমালা, ২০১২-এর বিধি ৯১ ও ৯৩ অনুযায়ী খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ এলাকায় অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা এবং অবৈধভাবে খনিজসম্পদ উত্তোলন বা আহরণ করা যাবে না। অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে শনাক্ত করে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা ও এ ধরনের কাজে লিপ্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা বা এখতিয়ার খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) ওপর ন্যস্ত। কিন্তু সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনা প্রতিরোধে বিএমডি থেকে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিবেদনে সাদা পাথর লুটে বর্ডার গার্ড বিজিবিকেও দায়ী করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাদা পাথর এলাকায় ৩টি বিজিবি পোস্ট রয়েছে। এগুলো হতে লুটের ঘটনাস্থলের দূরত্ব ৫০০ মিটার থেকেও কম। এত কম দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি কমান্ডার ইকবাল হোসেন-সহ বিজিবি সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীরা খুব সহজেই পাথর লুটপাট করতে পেরেছে। বিজিবি সদস্যরা প্রতি নৌকা ৫০০ টাকার বিনিময়ে এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেয় এবং পাথর উত্তোলনের সময় বাধা প্রদান করেননি। এদিকে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটপাটের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। বুধবার (২০ আগস্ট) মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। একইভাবে প্রতিবেদন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে পাথর চুরির সত্যতা পাওয়ায় অনুসন্ধানের সুপারিশ করা হয়েছে, যা কমিশনের সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।’ কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিবকে। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব)। অন্য সদস্যরা হলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি। এতে বলা হয়েছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটনস্পট ও রেলওয়ে বাংকার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও পর্যটন স্থানের নান্দনিকতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয় সরকার। অফিস আদেশে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
সূত্র-সকালের সময়
২০ পড়েছেন