• ২৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২রা জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

সিটি নির্বাচন: কারো পৌষ মাস আবার কারো সর্বনাশ !

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ৭, ২০২৩
সিটি নির্বাচন: কারো পৌষ মাস আবার কারো সর্বনাশ !

Sharing is caring!

আব্দুল হালিম সাগর বিশেষ প্রতিবেদন: আগামী ২১ জুন ২০২৩ সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচন। সিলেট পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নিত হয় ২০০২ সালের ২৮ জুলাই। বিগত ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া ও টুলটিকর ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই, বরইকান্দি ও তেতলী ইউনিয়ন অন্তভর্‚ক্ত করে নতুন করে আরো ১২ টি ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সীমানা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আয়তন ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। এবারের সিটি নির্বাচনে সরকারদলীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যারা দৌড় ঝাপ করছেন, তারা আগামী ৯ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবে। প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এরই মধ্যে মাঠে সক্রিয় আওয়ামী লীগের ৯ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের তৎপরতার জানান দিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। পাশাপাশি তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাÐের মাধ্যমে থাকছেন ভোটারদের কাছাকাছি। জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নগরজুড়ে পোস্টার ব্যানার টানিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত জাপার প্রার্থী হিসাবে ২ জন রয়েছেন আলোচনায়। বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী প্রয়াত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এবারও বিএনপি থেকে আরিফুল হক প্রার্থী হবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। যদিও এ বিষয়ে আরিফুল হকসহ বিএনপির নেতারা নীরব নিশ্চুপ। তবে আরিফুলকে ঠেক্কার দেবার মতো কোন শক্ত প্রার্থী নেই আওয়ামী লীগের। বিগত নির্বাচনের মতো এবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন অনেকে। নির্বাচনের আগেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের ঘরেই এক রকম গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন সমানে-সমান।এবার নির্বাচন হবে ইভিএমে। প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে সিসি ক্যামেরা। ভোটগ্রহণের হালনাগাদ তথ্য কর্মকর্তাদের ট্যাবের মাধ্যমে কমিশনকে জানাতে হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। সিটি নির্বাচনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। তফশিল অনুযায়ী, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে, বাছাই ২৫ মে ও ১ জুনের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনি মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও দলীয় অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যায় সেটি হাতছাড়া হয়ে যায়, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে। মেয়র পদে প্রয়াত বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের বিকল্প খুঁজছে আওয়ামী লীগ। হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশী কেউই স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। এদিকে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির লোক হওয়ায় আর কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে না। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত এলে যিনি মেয়র প্রার্থী হবেন, দল তার পক্ষে কাজ করবে। যেহেতু দেশের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দল বিএনপি, তাই অবাধ, নিরপেক্ষ যেকোনো নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রাথী না হলে আরিফুল হক হতে পারেন নাগরিক কমিটির প্রার্থী। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগের ৯জন ও জাতীয় পার্টির দুজন নেতা মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তাঁরা নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তাঁদের সমর্থনে ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড টাঙানো শুভা পাচ্ছে। বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। যেহেতু আমি দল করি, তাই দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নির্বাচন নিয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহী নই। তবে কিছুদিন অপেক্ষা করেন, সময়ই সব প্রশ্নের জবাব দেবে।’ আরিফুল হক চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা জানিয়েছেন, গত রোববার তিনি যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। দেড় সপ্তাহ পর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আরিফুলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরিফুল নিজের মতামত জানাবেন বলে তাঁরা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে যাবে না। এমন ঘোষণা দিয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে। এ অবস্থায় সিলেট সিটি নির্বাচনেও দলটি কোনো প্রার্থী দেবে না, বলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ধারণা। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেলে সহজে জয় পাওয়া যাবে। তবে বিএনপিসহ সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে সেই সুযোগে উন্নয়নবান্ধব মেয়র হিসেবে নগরে আরিফুলের ব্যাপক জনপ্রিয়তায় অনেকটা এগিয়ে আছেন। তাই নগরীর অনেক ভোটার চান, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আরিফুল যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন । দল নির্বাচনে না এলেও আরিফুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, দলের ভেতরে যেমন এমন একটা প্রচারণা আছে, দলের বাইরেও আছে। সব মিলিয়ে তিনি প্রার্থী হবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয় । তবে বিএনপির কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে কে মনোনয়ন পাবেন, এ নিয়ে কোনো ধারণা করা এখনই সম্ভব নয়। কারণ, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে একাধিক নেতা তৎপর আছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় আরিফুল হক চৌধুরীর বিকল্প নেতা বিএনপিতে নেই। বর্তমানে আরিফুল হক চৌধুরী লন্ডন সফরে রয়েছেন। তার এ সফরকে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সফর বলছেন অনেকেই। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন ব্যবসায়ী ও জাতীয় পার্টির নবাগত নেতা নুরুল ইসলাম বাবুল। তবে জাতীয় পার্টি থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নগরজুড়ে পোস্টার ব্যানার টানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক এটিএমএ জেবুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা.আরমান আহমদ শিপলু, প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ব্যবসায়ী ও ফুটবল সংগঠক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম, সাবেক কাউন্সিলর আবদুল খালিক, সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
ইতিমধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হিসেবে হাইকমান্ড থেকে সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে তার অনুসারীরা দাবি করে আসছে। তিনিও মাঠ পর্যায়ে কাজও শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। দলীয় প্রধানের আশীর্বাদে তিনি প্রার্থী হয়েছেন দাবি করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের জন্য তাকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতিকে সিলেটে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে সিলেটকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাবেন। সিলেটের সব সমস্যা দূর করে বিশ্বের আকর্ষণীয় নগরে পরিণত করবেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু নগর ভবনে পিতার ছেড়ে যাওয়া স্থানে নিজেকে আসীন করতে চান। আজীবন বঙ্গববন্ধুর আদর্শ লালন করা পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সিলেটবাসীর সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। ডা. শিপলু বলেন, খুব কাছ থেকে দেখেছি সিলেটের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। পিতার কাছ থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতাই সিলেটের উন্নয়নে কাজে আসবে। এ দিকে ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসা এটিএমএ হাসান জেবুল দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। রাজনীতির কারণে জেল, জুলুম, হুলিয়া মোকাবিলা করেও আওয়ামী লীগের পতাকা আঁকড়ে রয়েছেন। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি নগরের অলিগলিতে সাধারণ মানুষের কল্যাণে নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত জেবুল অ্যাসোসিয়েটের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এটিএমএ হাসান জেবুল বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সব আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম। জনগণের কাছাকাছি ছিলাম। প্রতিটি নির্বাচনে জীবনবাজি রেখে নৌকার পক্ষে কাজ করেছি। আমার সেন্টারে কোনো দিন নৌকা পরাজিত হয়নি। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। মনোনয়ন না পেলে নৌকার পক্ষে কাজ করে যাব।ব্যবসায়ী ও বাফুফের (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) সদস্য মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম গত বছরের মতো এবারও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বলেন, আমি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকলেও ক্রীড়া সংগঠক ও ব্যবসায়ী। প্রধানমন্ত্রী চাইলে ঢাকার মতো সিলেটেও মেয়র পদে একজন সংগঠক ও ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দিতে পারেন। আর এক্ষেত্রে আমি আশাবাদী মনোনয়ন পাব। কারণ ২০১৮ সালের এক অনুষ্ঠানে ফুটবল সংগঠকদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাওয়ার জন্য আমাকে বলেছেন। নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে সিলেটকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিছবাহ উদ্দিন সিরাজও আলোচনায় রয়েছেন। পাশাপাশি সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের অনুসারীরা গত নির্বাচনের মতো এবারও আজাদকে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চাই বলে অনলাইনে আর পোস্টার ব্যানারে দাবি জানাচ্ছেন। এ ছাড়া সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে ফেব্রæয়ারি মাসে ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বাবুলের পোস্টার নগরের বিভিন্ন মোড়ে সাঁটানো হয়েছে। এখন শেষ পর্যন্ত দেখার বিষয় আরিফুল হককে টেক্কা দিতে কে হচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী।

৫৬১ পড়েছেন