• ২৬শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটে চোরাকারবারী আবুলকে গ্রেফতারে ব্যর্থ প্রশাসন

admin
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩
সিলেটে চোরাকারবারী আবুলকে গ্রেফতারে ব্যর্থ প্রশাসন

Sharing is caring!

বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেট সীমান্তের চোরাচালান কোনে ভাবেই বন্ধ করতে পারছেনা থানা পুলিশ। প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ার সাথে-সাথে চোরাকারবারিরাও হয়ে উঠেছে বেশ তৎপর। তারা প্রতিদিন নিত্য-নতুন কৌশল পাল্টে সড়ক ও নৌ-পথে তাদের বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। যদিও ইদানিং বিভিন্ন থানা পুলিশ চোরোচালানের বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করায় মাঝে মধ্যে চোরাচালানের চিনি আটকের খবর আসছে মিডিয়ায়। কিন্তু রাগব বোয়ালদের সাথে-পাছে যেতে পারছেনা আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে চোনাপুটি গ্রেফতার হলেও রাগব বোয়ালরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। এবার সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরোচালানের একক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে হরিপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল খালিকের পুত্র আবুল হোসেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক চোরাকারবারী বলেন, আবুলের মালিকানাধিন মাদার পেট্টোল পাম্পের একটি ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাচালান। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত পাম্পের এই অফিসেই বসে চোরাকারবারীদের মিলন মেলা। রাত গভির হলে ভিড় করেন প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটের লোকজন। বুঝে নেন তাদের প্রতি দিনের বখরার টাকা। একমাত্র আবুলের মাল ব্যতিত আর তার সিগন্যাল ছাড়া অন্যকারো মাল শহরে প্রবেশ করলেই আবুল পুলিশ দিয়ে সেই মাল ধরিয়ে দেয়। কারণ আবুলের সাথে লিয়াজো ছাড়া কোন চোরাইমাল সিলেট শহরে প্রবেশ করতে পারবেনা এ রকম একটি নিয়ম আবুল চালু করেছে আবুল। প্রশাসনের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আবুলের হয়ে কাজ করছে বলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেক চোরাকারবারি নিশ্চিত করেছেন। যদি চোরোচালানে রোধে ব্যার্থ ও সহযোগীতার অপরাধে সপ্তাহ খানেক পূর্বে জৈন্তাপুর থানার ওসি ওমর ফারুককে পুলিশ লাইনে বদলী করা হয়েছে।
জনশ্রæতি মতে, গত কয়েকদিন পূর্বে হরিপুর গ্রামে আবুলের চোরাইমালের আস্থানায় অভিযান চালায় জৈন্তাপুর থানা পুলিশ। তারা সেখানে কয়েক শত বস্তা চিনি পাওয়ার পরও তা আটক না করে আবুলের সাথে লিয়াজো করে চলে যায়। এ ঘটনাটি পুলিশের উর্ধ্বতন মহলে জানাজানি হলে জৈন্তাপুর থানার ওসি ওমর ফারুককে বদলী করা হয়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর গ্রামের সাবেক মেম্বার আব্দুল খালিকের পুত্র আবুল হোসেন মাত্র দুই বছওে অঢাল সম্পদের মালিক। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলে সে চোরাচালানের কৌশল পাল্টে নিয়েছে। এবার তার মালিকানাধিন মাদার পেট্টোল পাম্পকে ব্যবহার করছে চোরাচালানের অফিস ও মুল ঘাটি হিসাবে। সড়ক পথের পাশাপাশি আবুল নৌপথে চোরাইপণ্য সারাদেশে সরবরাহ করছে বলে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। চোরোচালানে আবুলের সহযোগীরা হচ্ছেন বালিপাড়া গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে মিসবাহ, উৎলারপাড় গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে মহিবুল, একই গ্রামের লাল মুসার ছেলে কামাল। এদের প্রত্যেককে আবুল সেক্টর ভাগ করে দিয়েছে কেউ চিনির সাইট, কেউ মাদকের সাইট, কেউ কসমেটিক্সেও সাইট নিয়ন্ত্রণ করেন। আবুলের একান্ত সহযোগী হরিপুর গ্রামের মানিক মিয়ার বাড়িতে গড়ে তোলেছে চোরাচালানের বিশাল গোডাউন। সড়ক পথে প্রশাসনের নজরধারী বেড়ে যাওয়ায় এবার নৌকা দিয়ে হরিপুর নদীর হাদপাড়া ঘাট থেকে নৌকা বুঝাই করে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ হয়ে সুরমা নদী দিয়ে নগরীর কালিঘাটে চিনির চালান নিয়ে আসছে আবুল। মাত্র ২ বছর আগেও যে আবুল জাফলং খোলা দোকানে তেল, মবিলের দোকান দিয়ে পরিবারের জিবীকা নির্বাহ করতো, সে এখন চোরাচালান জগতের মাফিয়া। তার বিরুদ্ধে চোরাচালানের বেশ কয়েকটি মামলা আদালতে চলমান থাকলেও থেমে নেই তার চোরাকারবার। আবুলের বিরুদ্ধে জৈন্তপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট থানায় রয়েছে একাধিক চোরাচালান ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা। তবুও থেমে নেই আবুল। চোরাচালান জগতে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে চা পাতা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন সে চিনি, মাদক, ইয়াবার বড় ডিলার। গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর সীমান্তের প্রায় ৮০ ভাগ মাদক আসে আবুলের মাধ্যেমে। তার একেক পণ্যর নিয়ন্ত্রণ একেক সহযোগীর কাছে। স্থানীয় চোরাকারবারী খাজা মামুনের সাথে পরিচয় গোপন করে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে চিনির বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদের কারনে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সিলেটের তামাবিল সড়কের কোন পথে আবুল হোসেন ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাল প্রবেশ করবে তা দেখবাল করে নাইম। নাইম ব্যর্থ হলে দায়িত্বন নেন আবুল নিজেই। ডিআই পিকাপ ছাড়াও সিলেট নগরীতে নৌকা বুঝাই ভারতীয় চিনি প্রবেশ করছে প্রতিদিন। একাধিক চোরাকারবারিদের সাথে আলাপ করলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমরা আবুলের মাধ্যমে সিলেট শহরে অবৈধ ভারতীয় চিনি, ফেনসিডিল এনে থাকি। মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র আসে আবুলের হাত ধরে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে আবুলের এক সহযোগী বলেন নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে কিভাবে অস্ত্রেও ব্যবসা করা যায় সেই পরিকল্পনায় রয়েছে আবুল। এরকম একটি পার্টিও সাথে আবুলের ধর কষাকষি চলতেছে। প্রশাসন আবুলের এই মালগুলো ধরে না কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে চোরাকারবারিরা বলেন ভাই প্রশাসন তো আবুল ভাই নিয়ন্ত্রণ করে। আর রাস্তার টহল পুলিশকে গাড়ি প্রতি আগে পাঁচশত টাকা করে আমরা দিতাম। এখন আমরা রেইট বাড়িয়ে ৭শত করে দিলেই হয়।

৭৬৩ পড়েছেন