• ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৩ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

সুদান পরিস্থিতি, প্রবাসীদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

admin
প্রকাশিত মে ৪, ২০২৩
সুদান পরিস্থিতি, প্রবাসীদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনুন

Sharing is caring!

সম্পাদকীয়:  সুদানে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার সরকারি উদ্যোগ ইতিবাচক ও প্রশংসনীয়। সুদানে অন্তত ১৫০০ বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০০ জন দেশে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর বর্তমানে সেখানে যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরের প্রাক্কালে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার নির্দেশ দেওয়ার পর আটকেপড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আটকেপড়া বাংলাদেশিদের প্রথমে খার্তুম থেকে সুদান বন্দরে এবং সেখান থেকে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। জানা গেছে, সুদান প্রবাসীরা যেদিন জেদ্দা পৌঁছাবেন, সেদিন থেকেই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে তাদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সুদান উত্তর আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর এর উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত জনগণের অধিকাংশই মুসলিম এবং দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসর এলাকার অধিবাসীদের অধিকাংশই অমুসলিম। সুদান বিশ্বের সবচেয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ববহুল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিভাজন এবং মতবিরোধের ফলে সুদানে আধুনিককালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ অব্যাহত থাকলেও সর্বশেষ সংঘাত শুরুর পর সুদানের রাজধানী খার্তুম বসবাসের জন্য ‘ডেঞ্জার জোন’ হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। তথ্যমতে, মূলত খার্তুমের ইন্দুরমান, মারগাজি, বাগের, বাহারি, আরবি, সারেছিত্তিন ও ইমারাতে প্রবাসী বাঙালিদের বসবাস। ইতোমধ্যে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তবে দেশে ফেরার অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সেখানে অবরুদ্ধ আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন; বস্তুত অবরুদ্ধ খার্তুমে ভীষণ ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন বাঙালিরা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি অভিবাসীরা প্রায়ই বিরূপ পরিস্থিতি, প্রতিকূলতা ও হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অনেক প্রবাসী শ্রমিক প্রাণও হারাচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে সরকারের আরও সংবেদনশীল ও মানবিক হওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জমিজমা বিক্রি কিংবা ধারদেনা করে তারা বিদেশে পাড়ি জমান। এ অবস্থায় বিদেশে কেউ মৃত্যুবরণ করলে বা দুর্ঘটনার শিকার হলে তার পরিবার নিতান্তই অসহায় বোধ করে। সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের পরিবারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। সুদানে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেসামরিক লোকজন ছাড়াও জাতিসংঘ কর্মী ও মিসরের সহকারী প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা যে খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছেন, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি।

৩২৫ পড়েছেন